‘৭৫-এর পর জিয়াকে অনেকেই সমর্থন দিয়েছিল কেন?— এর উত্তর পাই না’
২৩ আগস্ট ২০২০ ১৫:২৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫-এর পর জিয়াউর রহমানকে অনেকেই সমর্থন দিয়েছিল কেন? এই কেন’র কোনো উত্তর পাই না। যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তারা কি এটা করতে পারে? এখনও দেখা যায় কিছু কিছু লোক তার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে।
রোববার (২৩ আগস্ট) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসবভবন গণভবন থেকে সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
১৫ই আগস্ট নিহতদের স্মরণে আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৫ই আগস্ট শুধু একটা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়নি; এর একটা লক্ষ্য ছিল, যে আদর্শ নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই আদর্শ এবং লক্ষ্যকে ধ্বংস করা। বাঙালি জাতির বিজয় মহান মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে বাঙালিরা এটা তারা মানতে পারেনি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পাশে ছিল, তারাও বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বিজয়কে মানতে পারেনি। কাজেই ষড়যন্ত্র চলছিল। কিন্তু দুভ্যার্গ আমাদের, দেশের ভিতরের অনেকেই বোধহয় সেটা বুঝতে পারেনি। জাতির পিতাকে হত্যা করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। পাকিস্তানিরা সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছিল।’
দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতার নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে তিনি যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন সেই সময় প্রয়োজন ছিল এদেশের সকল মানুষের একাত্ম হয়ে তার পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করা। কিন্তু আমাদের দুভার্গ্য তাকে হত্যা করা। এই প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য দলের অভ্যন্তরে নানা ধরনের খেলা শুরু হয়। এছাড়া কিছু লোক যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দালালি করেছিল এবং পাশাপাশি কিছু লোক যারা জেনে হোক বা না জেনে হোক নানাভাবে সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমালোচনার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তাদের লেখনি ও কার্যকলাপ ছিল পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে অপবাদ ছড়ানো। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল জাতির পিতার জনপ্রিয়তা, সারাদেশের মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করা। সেটা যখন তারা পারেনি তখন হত্যার পথ বেছে নেয়। যে কথাটা আমরা পাই বিবিসির কাছে দেওয়া কর্নেল ফারুক ও রশিদের ইন্টারভিউয়ে। তারা এই কথাটাই বলেছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে তারা চেষ্টা করছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে সরাতে। কিন্তু জনগণের মন থেকে মুছতে পারেনি। তাই তারা এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা কর্ণেল ফারুক-রশিদরা বলেছে। জিয়া সবসময় তাদের সঙ্গে ছিল এবং মোশতাক অবৈধভাবে যখন ক্ষমতা দখল করল, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল; তখনও খুনিদের সঙ্গে মোশতাকের পাশে ছিল। এ কারণেই জিয়াউর রহমানকে তখন সেনাপ্রধান করা হয়। এর মাধ্যমে মোশতাক এটাই প্রমাণ করে দিল, তারা একসঙ্গে চক্রান্তে সম্পৃক্ত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু মোশতাক বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আমরা ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই, দেখি সিরাজউদ্দৌলার সাথে বেঈমানি করেছিল মীরজাফর। ব্রিট্রিশ বেনিয়ার দল তাকে ব্যবহার করেছিল। সেও কিন্তু তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দুই মাসের বেশি কিছু সময় পরে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। ঠিক মোশতাকও তাই। যাদের প্রচোরনায় সে এই বেঈমানি বা মোনাফেকিটা করেছিল এবং জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছিল তারা কিন্তু তাকে ক্ষমতায় রাখেনি। ক্ষমতায় চলে আসে খলনায়ক জিয়াউর রহমান। মোশতাকের পতনের পর জিয়াউর রহমান হয়ে গেল একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি। এই দুই পদ নিয়েই সে বিরাজমান ছিল। তাহলে এটা থেকে কি প্রমাণিত হয়?’
এইভাবে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে তারা কি করেছে? সেই প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে রক্তঝরা; এটা শুরু হয়েছিল তখন থেকে। একটার পর একটা ক্যূ হয়েছে। সেখানে সেনাসদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কত নেতাকর্মীর লাশ গুম করেছে, কত মানুষকে হত্যা করছে। কিন্তু দুভার্গ্য জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে মন্ত্রী বানালো। যারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, নারী ধর্ষণ এবং নির্যাতন করেছে, পাকিস্তানিদের কাছে আমাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছে, লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তারা হলো মন্ত্রী।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যেদিন থেকে আমাদের বিজয় এসেছে, তারপর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে একটা গভীর চক্রান্ত কাজ করছিল। যেন আমাদের বিজয়টা আমরা ধরে রাখতে না পারি। জাতির পিতার নাম তো মুছেই ফেলা হয়েছিল? এই নাম নেওয়া যাবে না। ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো যাবে না। স্বাধীনতার ঘোষক সৃষ্টি হল। ইতিহাস বিকৃতির চরম একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমারা দেখেছি। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারে না, আজ সেটা প্রমাণিত।’
জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাবেন। কোনো মানুষ যেন ক্ষুধার্ত না থাকে, কোনো মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে, কোনো মানুষ যেন রোগে কষ্ট না পায় এবং প্রতিটি মানুষ যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই বর্তমান সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
সভার শুরুতে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা শোকাবহ যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। আর কবি মহাদেব সাহার কবিতা আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
১৫ই আগস্ট খন্দকার মোশতাক জাতির পিতা জাতীয় শোক দিবস জিয়াকে সমর্থন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা