Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কারাগারের ভেতরে নেই, রক্ষীদের সহায়তায় পালিয়েছেন আবু বকর’


২৩ আগস্ট ২০২০ ১৮:৪৭

ঢাকা: ‘রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ’ বাংলাদেশ জেলের প্রধান স্লোগান এটি। দীর্ঘদিন কারাবাস করেছেন তাদের মুখে শোনা যেত বহু যুগ আগে কয়েদিরা বুদ্ধি করে সুড়ঙ্গ করে পালাতেন। এ ছাড়া আদালতে নেওয়ার পর বিভিন্ন কৌশলে আসামি পালালেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। তবে এবারই ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। তা হলো কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে আসামি পালানোর ঘটনা। শুরুতে পালানোর বিষয়টি কেউ স্বীকার না করলেও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, আসামি আবু বকর ছিদ্দিক কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জিএমপি কমিশনার আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা হয়েছে। সব জায়গায় বার্তা দেওয়া হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

একটি হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি কিভাবে পালিয়ে গেলেন? এই পরিকল্পনা তো একদিনের নয় বলে মনে হয়, আপনারা কি পেয়েছেন জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, দেখুন কারাগারের নিজস্ব ফাঁক-ফোঁকড় না থাকলে তো কোনো আসামি পালাতে পারে না। এ নিয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্তাধীন বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

সিসি ক্যামেরা ফুটেজে কী দেখা গেছে? পালানোর দৃশ্যে কী পেয়েছেন জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, যা পাওয়া গেছে তা তো বলা যাবে না তদন্তের স্বার্থে। তবে একটি বিষয়ে যখন মামলা হয় তখন ও-ই ঘটনার পুরো বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। পালিয়েছে নাকি ভেতরেই লুকিয়ে আছে আবু বকর সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জিডি করা হয়েছিল। পরে যখন জানা গেলো আবু বকর নিশ্চিত পালিয়েছে তখনই মামলা করা হয়েছে।

পালানোর কাজে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কী কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। জানা গেছে কমিটি প্রতিবেদনও জনা দিয়েছেন। সেখানে যা বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হলে তা প্রতিপালন করা হবে।’

এদিকে আসামি পালানোর ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারের ১২ জন কর্মকর্তা ও কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারা অধিদফতর। একইসঙ্গে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে একজন যুক্তসহ মোট পাঁচজন কাজ করছেন। কমিটি এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেননি।

আসামি পালানোর পরে কারা কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে আসলে আবু বকর পালিয়েছে নাকি কারাভ্যান্তরে কোথাও লুকিয়ে আছে। কারণ এর আগেও একবার কারাগারের ভেতরে থাকা সেফটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে লুকিয়েছিলেন। একদিন পর তাকে উদ্ধার করা হয়।

তদন্ত কমিটিতে কাজ করছেন এমন একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর রাতেই কারাগারের ভেতরের সব সেফটিক ট্যাঙ্ক খোঁজা হয়েছে। কোথাও মেলেনি এরপর কারা কর্তৃপক্ষ চিরুনি সার্চ দিয়েছে কারাগারে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি আবু বকরকে। এমনকি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আবু বকরের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় অবহিত করে নজরদারি করা হয়েছে। সকল আত্মীয় স্বজনের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়ে তাতে নজরদারি অব্যাহত আছে। এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে নিশ্চিতভাবে জানা যায় আবু বকর পালিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা রোববার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, গত বুধবার (১৯ আগস্ট) কয়েদী আবু বকর পালানোর ঘটনায় গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে কী উঠে এসেছে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন বলেন, ‘প্রতিবেদনে আসামি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। পুরো বিষয়ে দায়ীদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে যাতে এরকম কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য সুপারিশ করেছে কমিটি। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে, এটি লুকানোর কিছু নেই। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। দুই-একদিন যাক বুঝতে পারবেন আসলে কী ঘটেছে আর কী হয়।’

প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়েছে তা কেউ না জানালেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার (২৩ আগস্ট) সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাঁসির আসামি পরবর্তীতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বকর সিদ্দিকের পালানোর পুরো বিষয়ে কয়েকজন কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তা জানত। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ১২ জন কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীর প্রায় সকলেই দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, কারা কর্মকর্তারা আসামি পালানোর বিষয়টিতে এমনভাবে সহায়তা করেছে যেন কোনোভাবেই তারা দায়ী না হয়। তদন্ত কমিটি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রত্যেককে আলাদা করে এবং মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একইসঙ্গে সিসিটিভি বিশ্লেষণ ও কারাবন্দিদের সঙ্গেও কথা বলেছে কমিটি। সবকিছুতেই কারারক্ষীদের সহযোগিতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়া আবু বকর অনেক দিন থেকেই যে কোনো মূল্যেই কারাগার থেকে পালানোর পথ খুঁজছিলেন।

কোনো টাকার লেনদেন হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানতে বলেন ওই কর্মকর্তা।

হাইসিকিউরিটি একটি কারাগার থেকে একজন কয়েদি পালানোর ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তায় সমস্যা রয়েছে কিনা? কি মনে করছেন জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ রোববার (২৩ আগস্ট) বলেন, ‘একজন কয়েদি পালানোর ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তার ত্রুটি আছে বলে মনে করি না। একজন আসামি পালানোর ঘটনাকে আমরা দুইভাবে বিশ্লেষণ করে থাকি। একটি হলো যে পালিয়ে যায় সে কোন ক্যাটাগরির আসামি। ভয়ঙ্কর নাকি সাধারণ। সাধারণ অপরাধের কোনো আসামি পালানোর চিন্তা করে না। আর ভয়ঙ্কর আসামি পালানোর ক্ষেত্রে দুটো বিষয় কাজ করে। একটি হলো সে সুড়ঙ্গ করে পালায় যা অতীতে আমরা দেখেছি। অন্যটি হলো কারাগারের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের ইচ্ছাকৃত বা দায়িত্বে অবহেলা।

তিনি বলেন, ‘কাশিমপুরের ক্ষেত্রে কোনটি হয়েছে তা নিশ্চয় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে। যাই হয়ে থাকুক বিষয়টি যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে আসামি পালানোর ঘটনায় অন্যান্য কারাগারগুলোতে কোনো ইফেক্ট পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগেই বলেছি, আমাদের দেশের কারাগারগুলো থেকে আসামী পালানোর সুযোগ নেই যদি না কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সহযোগিতা করে না থাকে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনদের একটি কাজ সবসময় করতে হয়, তার হলো, সবকিছু ঠিক আছে কিনা তার তদারকি করা। তদারকির বিষয়টি হয়তো কম হয়।’

কারাগার কাশিমপুর কারাগার টপ নিউজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাইসিকিউরিটি কারাগার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর