ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারীর টার্গেট ছিল ৩ মসজিদ
২৪ আগস্ট ২০২০ ১৩:০১
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশিসহ ৫১ জনকে হত্যাকারী শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের তৃতীয় আরেকটি মসজিদেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। খবর বিবিসি।
সোমবার (২৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে ক্রাইস্টচার্চে এ মামলার সাজা ঘোষণার শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে এ কথা জানিয়েছে অভিযুক্ত ব্রেন্টন ট্যারেন্ট।
এর আগে, ২০১৯ সালের মার্চে এই শহরেরই দুই মসজিদে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। তৃতীয় আরেকটি মসজিদে হামলা চালানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি সে মসজিদগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার এবং যত বেশি মানুষকে সম্ভব হত্যা করতে চেয়েছিল।
শুধু তাই নয়, বন্দুকধারী ট্যারেন্ট হামলার ঘটনা সরাসরি অনলাইনে সম্প্রচার করেছিল। সে ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ওই ঘটনার জেরে নিউজিল্যান্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের অস্ত্র আইন পরিবর্তন করে ফেলে।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে আনা ৫১ হত্যা, ৪০ হত্যাচেষ্টা ও সন্ত্রাসবাদের একটি অভিযোগে দায় স্বীকার করেছে ব্রেন্টন।
বিবিসি বলছে, ২৯ বছর বয়সী ট্যারেন্ট আজীবন কারাবাসের শাস্তি পাবেন, সম্ভবত কোনো প্যারোলও পাবেন না তিনি। নিউজিল্যান্ডে এ ধরনের সাজার প্রথম ঘটনা হবে এটি। এর আগে দেশটিতে কেউ এ ধরনের কোনো সাজার মুখোমুখি হয়নি।
অন্যদিকে, শুনানি চলাকালে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে আদালতের মূল কক্ষ প্রায় জনশূন্য ছিল। তবে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে দূর থেকে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন হামালা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও মৃতদের স্বজনরা। ক্রাইস্টচার্চের আদালত কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত সাতটি আদালত কক্ষে তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বারনাবি হউস আদালতকে জানান, বন্দুকধারী কয়েক বছর আগে থেকেই তার পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল হামলা চালিয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে হত্যা করা।
তিনি জানান, হামলাকারী নিউজিল্যান্ডের মসজিদগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। মসজিদগুলোর নকশা, অবস্থান ও অন্যান্য বিস্তারিত নিয়ে অনুসন্ধান চালান। সবচেয়ে বেশি লোক জড়ো হয় এমন এক সময়ে হামলা চালানোর লক্ষ্য নিয়ে এসব করেছিল সে।
তিনি আরও বলেন, হামলার কয়েক মাস আগে ক্রাইস্টচার্চে গিয়ে একটি ড্রোন উড়িয়ে সে তার প্রথম লক্ষ্য আল নূর মসজিদ পর্যবেক্ষণ করে নেয়। আল নূর মসজিদ ও লিনউড ইসলামিক সেন্টারের পাশাপাশি অ্যাশবার্টন মসজিদেও হামলা হামলার লক্ষ্য ছিল তার।
পাশাপাশি, হামলার দিন ট্যারান্ট আল নূর মসজিদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকারী লোকজনকে রাস্তায়ও গুলি করে বলে আদালত শুনেছেন। সে এই মসজিদ চত্বর ত্যাগ করার সময় এদের মধ্যে মৃত একজন, আনসি আলিবাবার শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।
অপরদিকে, লিনউড ইসলামিক সেন্টারের দিকে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সে গাড়ি থামিয়ে আল নূর মসজিদ থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া আফ্রিকান অভিবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় সে অল্প সময়ের জন্য একজন ককেশীয় পুরুষের দিকেও বন্দুক তাক করেছিল কিন্তু তারপর তার দিকে হাসি দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
গ্রেফতার হওয়ার পর ট্যারেন্ট পুলিশকে জানিয়েছিল, তার পরিকল্পনা ছিল হামলার পর মসজিদগুলোকে পুড়িয়ে দেওয়া।
প্রসঙ্গত, ট্যারান্ট তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন আর জুনে তার বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই সে দোষ স্বীকার করে নেয়। আদালতে সে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেনি, নিজেই নিজের প্রতিনিধিত্ব করছে।