প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী হচ্ছে না এ বছর
২৫ আগস্ট ২০২০ ১৭:০৬
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ না কমায় চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই পরীক্ষা আয়োজন না করার প্রস্তাবে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিকল্প হিসেবে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারবে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করেছি। সে অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় তিনি আমাদের প্রস্তাবে ইতিবাচক সায় দিয়েছেন।
এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা নেওয়া না হলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। তবে স্কুল খোলা সম্ভব হলে পঞ্চম শ্রেণি ছাড়া অন্যান্য ক্লাসের পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটির প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরও বলেন, এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি দেওয়া হবে না। তবে নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। আগামী বছর পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হলে আবারও বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এর আগে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১৯ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিল। ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠদান দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। ১৮ মার্চ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকছে। ঘরে বসে শিখি শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। আবার যেসব শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন নেই, তাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা যায়নি।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এতে ৯৭ শতাংশ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ও রেডিও’র মাধ্যমে পাঠ সুবিধা নিতে পারছে। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকেরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি পাঠ ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা সমাপনী নিতে হলে কমপক্ষে আর ৫০টি ক্লাস নিতে হবে উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবে বলছে, সেপ্টেম্বরে স্কুলগুলো খুলে দেওয়া না হলে পরবর্তী দুই মাসে দুই স্তরের বাকি ক্লাস শেষ করা যাবে না। তাই ২০২০ সালে এই দুই স্তরের সমাপনী পরীক্ষা বাদ দিয়ে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পাস করিয়ে সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়। সেই প্রস্তাবনা অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
ইবতেদায়ি সমাপনী পিইসি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক সমাপনী সমাপনী পরীক্ষা