চলতি বন্যায় সিরাজগঞ্জে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ২৩ কোটি টাকা
২৫ আগস্ট ২০২০ ১৮:২৮
সিরাজগঞ্জ: মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চলতি বন্যায় সিরাজগঞ্জে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ও মৎস্য খাতে ২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ৫৯২ মাছ চাষি ও পুকুর মালিক এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ও ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর দাবি করেছেন কৃষি ও মৎস্য চাষীরা।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুরের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও মৎস্য বিভাগ ক্ষতির বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলমান বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলায় ২০২৩ হেক্টর সবজি, ৭২৭০ হেক্টর পাট, তিল ১৭৬০ হেক্টর, আউশ ২৬৫৫ হেক্টর, আখ ২০৬২ হেক্টর, বোনা আমন ৭৫৭২ হেক্টর, রোপা আমন ৩৪৬ হেক্টর, বীজতলা ৬১৩ হেক্টর সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। মোট ২২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও ফসলি মাঠে পানি আছে। এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলার ৭শ ৬০টি পুকুর, যার আয়তন ২৬৭ হেক্টর ৪ শতক। এসব পুকুরের ১৫১ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩০ কেজি মাছ ও ৯ লাখ ১৯ হাজার পোনা ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া মাছের মূল্য ২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ও পোনার মূল্য ১৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। মোট ক্ষতি ২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত টাকা।
তাড়াশ উপজেলার মৎস্য চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, ২ বিঘা জমির ওপরে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরে দেড় লাখ টাকার মাছ ছিল। বন্যা শুরু হলে পুকুরপাড়ে জাল দিয়ে ঘিরে দেই। কিন্তু পানির স্রোতে জাল ছিঁড়ে মাছ বের হয়ে গেছে। এখন কিভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে ধার দেনা শোধ করবো, সেই দুশ্চিন্তায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। এ অবস্থায় সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা করছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহেদ আলী বলেন, জেলায় মৎস্য খাতে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৎস্য চাষিকে পুকুরে বেশি বেশি করে খাবার দিতে বলছি। এছাড়া পুকুরে গাছের ডাল ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে করে মাছ পুকুরে আশ্রয় নেবে। মৎস্য চাষিরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।