এমপি মোস্তাফিজুরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, আ.লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি
২৫ আগস্ট ২০২০ ১৯:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে মহানগরীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর শাখার যৌথ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সাংসদ মোস্তাফিজের ছবিতে আগুন দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইস্থানে সোমবার সকালে বাঁশখালীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সাংসদের অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর শাখা। মানববন্ধন চলাকালে সাংসদের নামে স্লোগান দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। রাতে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী বাঁশখালীর পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক, সাংসদের ব্যক্তিগত সচিব তাজুল ইসলাম, সহকারি ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মোস্তাফিজুর রহমান রাসেলসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন মো. বাবর।
হামলার প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগরের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসে যে এমপি তার গুণ্ডা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের পেটাতে পারেন, সেই লোক কখনও আওয়ামী লীগের এমপি হতে পারে না। আমরা আওয়ামী লীগে মোস্তাফিজুর রহমানের মতো লোক দেখতে চাই না। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের ওপর হামলা-অপমান মেনে নেওয়া হবে না। মোস্তাফিজকে চট্টগ্রাম নগরীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তাকে সামনে পেলে জুতাপেটা করা হবে।’
গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, ‘মোস্তাফিজ কোনো রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একজন দুর্বৃত্ত। তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করুন। আওয়ামী লীগ যদি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল বলে দাবি করে, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার নির্দেশদাতা মোস্তাফিজকে দলে রাখতে পারে না। তার সংসদ সদস্যপদ অবিলম্বে বাতিল করুন।’
মুক্তিযোদ্ধা-লেখক সিরু বাঙালি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, অস্ত্র কাঁধে নিয়ে পাকিস্তানিদের তাড়িয়েছি মোস্তাফিজের মতো লোককে এমপি বানানোর জন্য নয়। এই জাতির দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো লোক আমাদের পার্লামেন্টের মেম্বার হয় এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায়। তার কতবড় সাহস যে, বাঁশখালী থেকে লোক এনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে! এত সাহস সে কোত্থেকে পেল? কার মদদে? নিশ্চয় রাষ্ট্রীয় কোনো শক্তির মদদ আছে মোস্তাফিজের পেছনে। রাষ্ট্রের কোন শক্তি মোস্তাফিজের মতো দুর্বৃত্তকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা দরকার।’
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘আগস্ট মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না, পকিস্তানপন্থী-জঙ্গিবাদি গোষ্ঠী নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দলেরই একজন এমপি এই আগস্ট মাসে একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি এই ঘটনার নির্দেশদাতা সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নগরীর কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় পার্টি করতেন। পরে আওয়ামী লীগে এসেছেন। বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেন না। আমরা আওয়ামী লীগ করি। তারপরও একজন আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছি। কারণ জাতির জনকের আদর্শই হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। আওয়ামী লীগের মতো দলের সংসদ সদস্য পদে তিনি থাকতে পারেন না। তাকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পরিচয় দিতে নেতাকর্মীরা লজ্জাবোধ করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রয়াত নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বিরুদ্ধে অশালীন কথা বলেছেন। তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।’
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘যে মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান যার বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দেওয়া মৌলভী সৈয়দের ভাই। আজকের আওয়ামী লীগ মৌলভী সৈয়দদের রক্তে গড়া আওয়ামী লীগ। অথচ আমাদের এমন দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামী লীগের এমপি হয়েও মোস্তাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে ফুল দিতে যান না। শোকের মাস আগস্টে মৌলভী সৈয়দের কবরে ফুল না দিতে না গিয়ে তিনি স্ত্রীর জন্মদিনের কেক কেটেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোক দলে পদ পেলে এবং সাংসদ হলে এই ধরনের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডই হবে, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তাদের ওপর হামলা করানোর মতো ধৃষ্ঠতা আমরা মেনে নিতে পারি না। সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তাকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা প্রতিরোধ করবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার, দলীয় সব পদ-পদবি এবং সাংসদ পদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি করছি। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবো।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- চট্টগ্রাম মহানগর ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুর রাজ্জাক, আবু তাহের, আক্তার হোসেন, মহি উদ্দিন, সরওয়ার হোসাইন চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শরফুদ্দীন চৌধুরী রাজু, মশিউজ্জামান পাভেল, মিজানুর রহমান সজিব, মো. সাজ্জাদ হোসেন, কাজী মুহাম্মাদ রাজিশ ইমরান, কামরুল হুদা পাভেল প্রমুখ।
অবাঞ্ছিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বহিষ্কারের দাবি বাশখালী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড