করোনা ও বন্যায় দরিদ্র হবে ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ: সিপিডি
২৫ আগস্ট ২০২০ ২২:২৫
ঢাকা: চলতি বছরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অভিঘাত ও বন্যার কারণে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন। ঝুঁকিতে থাকা লোকের সংখ্যা মোট কর্মসংস্থানের ২০ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে করোনা ও বন্যায় দেশের দারিদ্রের সংখ্যা ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হবে। অর্থাৎ এই সময়ে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়বে ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, আরডিআরএস বাংলাদেশ ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘করোনা ও বন্যা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি: সরকারি পরিসেবার কার্যকারিতা শীর্ষক’ এক ভার্চুয়াল সংলাপে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। বক্তব্য রাখেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম, রংপুর জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিড‘র সিনিয়র গরেষক মোস্তফা আমির সাব্বিহ।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা ও করোনা এসডিজি বাস্তবায়নকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করবে। এটা এসডিজি বাস্তবয়নে বড় ধরনের প্রভাব রেখে যাবে। পাশাপাশি আগে এসডিজি বাস্তবায়নে যে বাধা ছিল, বর্তমানে করোনা ও বন্যার কারণে এই বাধার হার আরও বেড়ে যাবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনা ও বন্যায় দেশের রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে। এবারের বন্যায় রংপুর বিভাগের ২৯ শতাংশ ভূমি প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষদের জন্য সরকার বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে। এসব সহযোগিতা, বিশেষ করে জিআই চাল ও ৫০ লাখ পরিবারের জন্য নগদ সহায়তার বিষয়টি এই গবেষণায় আমলে নেওয়া হয়েছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, এই সহযোগিতা অনেক সময় সঠিকভাবে সঠিক লোকের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আন্তরিকতা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব ছিল। কোনো কোনো স্থানে পছন্দ এবং দলীয় লোকদের মাঝে ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে— এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দেশের অনেক স্থানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা অনেক ঝুঁকির মধ্যেও বিভিন্ন ত্রাণ সহযোগিতা করেছেন। তবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। তাদের কাজের মাঝে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
সিপিডি‘র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশের নীতিগত পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মনোভাবের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আবার তৃণমূলের জনগণও তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনা ও বন্যা জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকারকে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার এরই মধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে তথ্যপ্রবাহ অবাধ করতে হবে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় ১ হাজার লোকের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নগদ এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। পুরো জেলায় ৬ জন লোক অভিযোগ করেছেন যে তারা মেসেজ পেলেও টাকা পাননি। সেই অভিযোগও আমলে নিয়ে সমাধান করা হয়েছে।
অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত বলেন, বর্তমানে আমাদের করোনা ও বন্যার মতো বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই দুর্যোগে ৫৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অক্সফাম বাংলাদেশ তার সীমিত ক্ষমতা নিয়ে ১ লাখ ১০ হাজার লোকের কাছে সহায়তা নিয়ে পৌঁছেছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের চাহিদার তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুব বেশি না। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই এবং সরকারের ভূমিকাও অনেক বেশি। প্রশ্ন হলো, যাদের জন্য সরকার সাহায্যে সহযোগিতা জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় সেগুলো প্রকৃত লোকজন পাচ্ছে কি না, সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে।
অক্সফাম আরডিআরএস বাংলাদেশ করোনাভাইরাস কর্মসংস্থান কোভিড-১৯ দরিদ্র দারিদ্র্য বন্যা বেকারত্ব সিপিডি