লিয়াকতের বিরুদ্ধে মামলা, বাবুলকে আমলে নেননি আদালত
২৬ আগস্ট ২০২০ ১৫:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজার জেলার টেকনাফে সেনা কর্মকর্তা ‘হত্যাকাণ্ডে’ সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরও চার জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা হয়েছে। ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আনা হয় মামলাতে। একই মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ আরও ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হলেও আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেননি।
বুধবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়ে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণের আবেদন করেন বাদী। কিন্তু আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী এস এম জসিম উদ্দিন নগরীর পতেঙ্গা থানার নাছিরনগর এলাকার বাসিন্দা নেকবার হোসেনের ছেলে। তার আইনজীবী জুয়েল দাশ এসব তথ্য জানান।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক এসআই লিয়াকত আলী এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাবেক এসআই নজরুল ও হান্নান। এছাড়া এস এম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান নামে আরও চার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে লিয়াকত আলী কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান ‘হত্যা’য় জড়িয়ে সম্প্রতি বরখাস্ত হয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত আমলে নেননি তারা হলেন— ডিবির সাবেক এসআই সন্তোষ কুমার, পতেঙ্গা থানার সাবেক এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার সাবেক এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে নগরীর খুলশী থানার ওসি) প্রনব চৌধুরী, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি) মর্জিনা বেগম এবং ডিবি’র সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া) বাবুল আক্তার।
বাদী এস এম জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, নগরীর সাগরিকা বিসিক শিল্প এলাকার একটি কারখানার মালিক তিনি। ২০১৩ সালে তার কারখানায় চুরির ঘটনায় তিনি আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিবি’র তৎকালীন এস আই লিয়াকত আলী।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২০১৪ সালের ১৪ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী আমাকে তার অফিসে ডেকে নেন। এর আগেই মামলা সঠিকভাবে তদন্তের জন্য আমার কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য চাপ দেন। আমি রাজি না হয়ে যখন বেরিয়ে আসছিলাম, তখন কয়েকজন পুলিশ সমস্য মিলে আমাকে আটক করে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ খোলার পর দেখি আমি পতেঙ্গা থানায় আছি। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে আমাকে মারধর করে, ইলেট্রিকের শক দেয়। পরে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আমি আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে দিই।’
জসিমের দাবি, টাকা দেওয়ার পরও তাকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ভুয়া পরোয়ানার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সবাই তাকে নির্যাতন, ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকার আদায় এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মামলার আরজিতে বাদী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০ (খ), ১৬১, ১৬৬, ২২০, ৩০৭, ৩২৩, ৩২৫, ৩৬৪, ৩৭৯, ৪৬৬, ৪৬৯, ৪৭১, ১৪৯, ৫০৬ ধারায় অভিযোগ এনেছেন।
বাদীর আইনজীবী জুয়েল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরাসরি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরাসরি আমলে নেননি। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সেটি প্রতিবেদনে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
আদালতে মামলা এসপি বাবুল আক্তার পরিদর্শক লিয়াকত আলী ব্যবসায়ীর মামলা মামলা