অবলীলায় চলছে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড: ফখরুল
২৬ আগস্ট ২০২০ ১৮:৪৭
ঢাকা: ‘গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ অবলীলায় ঘটে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স— এটা একটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। দিস এ ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি, জাতিসংঘের চার্টারে সেটা আছে। অথচ সেটা এখানে (বাংলাদেশ) অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে।’
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির গুম-বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার ৪০টি পরিবারকে সহযোগিতা প্রদানে এই অনুষ্ঠান হয়।
করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে গুম ও খুন হওয়া ঢাকা মহানগরের এস এম আদনান চৌধুরী, কাওসার হোসেন, ডা. সগীর, নজরুল ইসলাম, মো. মজিদ, ঢাকা জেলার ফয়সল উদ্দিন হাশেমী ও মানিকগঞ্জের মো. শাওন— এই সাত পরিবারের সদস্যের হাতে আর্থিক সহযোগিতার টাকা তুলে দেন মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যখন দেখি, সেনাপ্রধান আর পুলিশ প্রধান দু’জনে পাশাপাশি বসে প্রেস কনফারেন্স করেন, মেজর সিনহার গুলির পরে বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কার কাছে যাব? কোথায় যাব? কী বলব?’
এই অবস্থার পরিবর্তনে জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে, তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখন যে লড়াই, এই লড়াই হচ্ছে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবার লড়াই, এই সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার সংগ্রাম, এ লড়াই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জয়লাভ করতেই হবে।’
গুম হওয়ার পরিবারের আর্তনাদের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আর কতকাল, কত দিন আমরা এভাবে চোখের অশ্রু ফেলব? আজকে যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে, অধিকারের জন্য লড়াই করে তাদেরকে নির্মম-নির্যাতন-অত্যাচারের শিকার হতে হয়। তারা আর্তনাদ করছেন তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে পাওয়ার জন্যে।’
তিনি বলেন, ‘গুম হওয়া, খুন হওয়া মানুষের আর্তনাদ তাদের (সরকার) কানে পৌঁছায় না। তাদের কানে পৌঁছায় না এই জন্যে যে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে তাদের এতটুকু দ্বিধা হয় না। নিরীহ সন্তানদের পিতৃহারা করতে তাদের এতটুকু সংকোচ হয় না।’
ফখরুল বলেন, “অবলীয়লায় তারা মিথ্যা কথা বলে, অবলীলায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমরা যখন নিখোঁজ বা গুম হওয়ার কথা মানুষের সামনে বার বার করে তুলে ধরি, তখন তারা বলেন— ‘না, আমরা তো এটা বলতে পারি না। অনেকে চলে যায়, নিজেরা নিজেরা চলে যায়। তারা না কি হারিয়ে গেছে।’ অনেকে বলে, এ ধরনের কোনো ঘটনাই নাকি ঘটে নাই।”
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ২০১৪ সালে গুম হওয়া এসএম আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী ও কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০০৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, এস এম জিলানি, ফখরুল ইসলাম রবিন, গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ, নজরুল ইসলাম, রফিক হাওলাদার, হারুনুর রশীদ, আজিজুর রহমান মোসাব্বির, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের রিয়াজউদ্দিন নসু ও শায়রুল কবির খান।
ফাইল ছবি