মামলা হত্যা খুন গুমে সারা দেশ জর্জরিত: ফখরুল
১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:৫২
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মামলা, হত্যা, খুন ও গুমে সারা দেশ জর্জরিত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানবন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ মানবন্ধন আয়োজন করে বিএনপি।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কাছে একটা হিসাব আছে— আপনাদের জানাতে চাই। এটা আমাদের পার্টির হিসাব। গত পাঁচ বছরে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা ৭৮ হাজার, আসামীর সংখ্যা ৭ লাখ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুনের সংখ্যা ৭২০ জন। অপহরণের সংখ্যা ৬৪৭, এখন পযর্ন্ত নিখোঁজ আছে ১৫৭ জন। নির্যাতনের শিকার ৩৭ লাখ নেতা-কর্মী।’
“স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এখনো জেলের মধ্যে রয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অসংখ্য ‘মিথ্যা’ মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। সারাদেশ কারাগারে, মামলায়, হত্যায়, খুনে, গুমে, জর্জরিত হয়ে গেছ। এমন একটি পরিবার নেই, যারা শান্তিতে রয়েছে। …আমাদের সামনে এখন একটিই পথ। সে পথ হচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবে এই সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা”—বলেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু সে নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সে নির্বাচন হতে হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে। আমাদেরকে মানববন্ধন করতে দেবেন না, সমাবেশ করতে দেবেন না, পার্টির কনভেনশন-কনফারেন্স করতে দেবেন না, কোথাও কথা বলতে দেবেন না—সেইভাবে কোনো দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সব কিছু লিখতে পারেন না। সেই জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বকাও খেতে হয়। আজ কী দুর্ভাগ্য। সাগর-রুনি হত্যা হয়েছে, এখন পযর্ন্ত তার বিচার হয়নি। অসংখ্য সাংবাদিক গুম হচ্ছেন, আহত হচ্ছেন, পঙ্গু হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন— মানুষ এখন পর্যদস্ত। এখন আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে; এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সন্তানদের যাতে ফিরিয়ে আনতে পারি, এই দেশের মানুষকে সত্যিকার অর্থে স্বস্তি, শান্তি এবং সুশাসন দিতে পারি, তার জন্য কাজ করতে হবে।’
খুন-গুমের শিকার কয়েকটি পরিবার বিএনপি আয়োজিত মানববন্দনে অংশ নেয়। এর মধ্যে কয়েকজন বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘ সরকারের বিরুদ্ধে যদি কেউ কথা বলে, সে গুম হয়ে যায়, তাকে হত্যা করা হয়— এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না। সরকারের মুখে শুনি, বাংলাদেশ নাকি বিশ্বের রোল মডেল। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কি বিশ্বের কাছে গুম-খুনের রোল মডেল? বাংলাদেশ কি সারা পৃথিবীর কাছে মানবাধিকার লংঘনের রোল মডেল? এই প্রশ্নের উত্তর আজকে সরকারকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘‘আজ কেবল নাগরিকদের গুম করা হয়নি। বাংলাদেশ থেকে সরকার যা গুম করেছে, তা হলো ‘মানবাধিকর’। সরকার আজ মানবাধিকারকেই গুম করে দিয়েছে।’’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচি রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
মানববন্ধনে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক অংশ নেন। তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ছিল। বিভিন্ন সময় গুম হয়ে যাওয়া নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ছবি ছিল এসব পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে।
সারাবাংলা/এজেড/এমআই