সড়কের ‘মি. টু পারসেন্ট’র অবৈধ সম্পদের পাহাড়, রয়েছে ঠিকাদারিও!
২৭ আগস্ট ২০২০ ২৩:০১
ঢাকা: প্রতিদিন পাজেরো গাড়ি হাঁকিয়ে ঢাকা থেকে গাজীপুরে যান অফিস করতে। সঙ্গে দু’জন বডিগার্ড। অফিসে পৌঁছে তারা দাঁড়িয়ে থাকেন দরজার সামনে। তার অফিসের টেবিলে রয়েছে অনেক ভিভিআইপির ভিজিটিং কার্ড। কেউ তার কাছে গেলে ওইসব কার্ডধারী লোকদের সঙ্গে তার ওঠাবসা দাবি করে ভয় দেখান। ঠিকাদারারা কাজের বিলের জন্য গেলে তাকে ‘টু পারসেন্ট’ হারে ঘুষ দেওয়ার রীতিও চালু করেছেন। এমনকি ‘টু পারসেন্ট’ না দিলে ওই বিলও তিনি ছাড়েন না। এছাড়া তার নাকি ঠিকাদারি ব্যবসাও রয়েছে।
এমন অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য ও সড়ক বিভাগের বিভাগীয় হিসাবরক্ষক মমতাজ আলা জাকির আহম্মেদের বিরুদ্ধে। তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের একটি দৃশ্যও ধরা পড়েছে গোপন ক্যামেরায়, যা সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হিসাবরক্ষক আলা জাকির তার নিজস্ব কিছু লোকের নামে লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কাজ করাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি ‘আঁখি এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়ক ভবনের স্টাফ কোয়ার্টার সংস্কারের ১৪ লাখ টাকার কাজ করেছেন। এছাড়া কাপাসিয়ার একটি রাস্তার কাজও করেছেন তিনি। তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা-মোকাদ্দমাও করেছেন। গাজীপুরের ঠিকাদার আবদুল কাদির, মাসুদ, মজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন করেছেন এমন অভিযোগ।
পূর্ত অডিট অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার কথায় উঠবস করেন— এমনটা বলে বেড়ান মমতাজ আলা জাকির। গাজীপুরের গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য ও সড়ক জনপথের কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাদের অভিযোগ, জাকিরের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিতে চাইলে তিনি ‘ওপর মহলে’ হাত আছে বলে হুমকি দেন। তিনি প্রায়ই বলে বেড়ান, ‘এজি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমি মাসোহারা দিই। তাই হেড অফিসে অভিযোগ করে কোনো কাজ হবে না।’
‘টু পারসেন্ট’ ঘুষ নেওয়া ও ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ধানমন্ডিতে তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উদ্যানের পাশে পাঁচ কাঠা জমিতে টিনশেড ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। মিরপুরেও তার একটি ফ্ল্যাট আছে বলে জানা গেছে। আর বিমানবন্দর সড়কের পাশে নিকুঞ্জে পাঁচ কাঠা জমির ওপর রয়েছে টিনশেড একটি বাসা। তার সেই বাসা ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলা জাকির ঠিকাদারদের ফাইল আটকে কমিশন নেন। বিলের ‘টু পারসেন্ট’ তাকে দিতে রাজি হলে তিনি সেই ফাইল ছাড়েন। তা না দিলে ফাইল আটকে থাকে তার টেবিলে। এমন কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাকে ‘টু পারসেন্ট’ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সড়কের প্রকৌশলীরাও বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, তার নিয়োগ হয়েছে অন্য অফিস থেকে। যে কারণে সড়কের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
এসব বিষয় নিয়ে সারাবাংলার প্রতিবেদক পরিচয়ে আলা জাকিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রথমে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শোনেন, এরপর লাইন কেটে দেন। পরে আবার ফোন দিলে আরেকজনকে দিয়ে ফোন ধরিয়ে বলেন, তিনি সেখানে নেই। এভাবে এক সপ্তাহ চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বরাবরই অভিযোগ আর সাংবাদিক পরিচয় শুনেই লাইন কেটে দেন তিনি।
বিভাগীয় হিসাবরক্ষক পদায়ন করে পূর্ত অডিট অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলামের কাছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বেনামি অভিযোগ পেয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মমতাজ আলা জাকিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, আলা জাকির ২০১৭ সালে গাজীপুরের সড়ক ও জনপথে বিভাগীয় হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার আগের কর্মস্থল ছিল কুড়িগ্রাম, নরসিংদী ও নারায়গঞ্জ সড়ক বিভাগ। এর আগেও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তিনি কারাগারে গেছেন। কুড়িগ্রামে সড়ক ভবনের দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেল খেটেছেন তিনি।
২ পারসেন্ট ২ পারসেন্ট ঘুষ অবৈধ সম্পদ গণপূর্ত ঘুষ লেনদেন জনস্বাস্থ্য ও সড়ক বিভাগ বিভাগীয় হিসাবরক্ষক মমতাজ আলা জাকির আহম্মেদ