করোনায় বন্ধ ১০৫ কারখানা, কাজ হারিয়েছে ৫০ হাজার শ্রমিক
২৮ আগস্ট ২০২০ ০৮:২৭
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সদস্যভুক্ত ১০৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কাজ হারিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা শ্রমিকদের করোনার অজুহাতে চাকুরিচুত্যির মাধ্যমে সার্ভিস বেনিফিট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা ছিল খুবই অমানবিক। বিভিন্ন কারখানায় এখন আবার নতুন করে নিয়োগ শুরু হয়েছে। কাজ হারানো বহু শ্রমিক নগরীতে ফিরতে শুরু করছেন। আর মালিকপক্ষ বলছে, এখনো তাদের জন্য টিকে থাকাটাই কষ্টের। নতুন করে নিয়োগ এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি।
বিজিএমইএ জানিয়েছে, করোনার পর তাদের সদস্যভুক্ত ১০৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছে ৪৮ হাজার ৪৮৯ জন শ্রমিক। বন্ধ হওয়া কিছু কারখানা হলো— উইংস গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লি., গ্রীণল্যান্ড গার্মেন্টস লি., কামটেক্স লি., সান চেরি বডি ফ্যাশন লি., অ্যাফকো আবেদিন গার্মেন্টস লি., ববি নিট ফ্যাশন লি., ডাউন জিএমটিএস অ্যান্ড টেক্সটাইল লি., জিডিএম ওয়েরাস লি., গুড ডে অ্যাপারেলস লি., গুড ডে গাইস লি., এমএপি নীটওয়্যার লি., ম্যানশিন কো (বিডি) লি., রেডওয়ান টেক্স অ্যাপারেলস লি., শান্তা গার্মেন্টস লি., স্যার ডেনিম লি., সুপারটেক্স অ্যাপারেলস লি., ট্যাক্স টেইলর অ্যাপারেলস লি., ইয়াকুব ফ্যাশন লি., অল ওয়েদার ফ্যাশন লি., ব্রাইট অ্যাপারেল লি., মিস্তিয়া সোয়েটার লি., স্পিডওয়েল ফ্যাশন লি., স্পটফেইম অ্যাপারেলস লি., স্টিচ রাইট লি., জেইন অ্যাপারেলস লি., এএমসি নীট কম্পোজিট লিমিটেড।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক (শ্রম) রেজওয়ান সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। গত দুই-তিন মাসে এই কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানায় নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে— এমন তথ্য আমার জানা নেই।’
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাগুলো মূলত করোনার কারণেই বন্ধ হয়েছে। করোনায় তো সবার অর্ডার কমে গেছে। ছোট কারখানাগুলোর টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই আছে যারা বায়িং হাউজের অর্ডারের মাধ্যমে চলে। তাদের তো এখন অর্ডার নেই। সবারই এখন কাজ কম। তাই কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের জন্য এখনো টিকে থাকতেই কষ্ট হচ্ছে। নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার তো প্রশ্ন ওঠে না।’
তবে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সব কারখানা যে বন্ধ হয়েছে, তা ঠিক নয়। ছোট ছোট কিছু কারখানা হয়তো বন্ধ হয়েছে। তবে অনকে কারখানাই স্থানান্তরিত হয়েছে। তারা হয়তো আরও বড় আকারে কারখানা চালু করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো কিছু কারখানায় ছাঁটাই হচ্ছে। তবে তা সীমিত আকারে। আবার কিছু কারখানায় এখন নতুন করে নিয়োগও দেওয়া হচ্ছে। যাদের চাকরি গিয়েছিল তারা এখন আবার ঢাকায় ফিরে আসছে। তেজগাঁওয়ের উর্মি গার্মেন্টসে যেমন বড় আকারের নিয়োগ হয়েছে। এমন আরও কারখানা আছে। করোনার অজুহাতে শ্রমিকদের চাকুরিচুত্য করে তাদের সার্ভিস বেনিফিট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন নতুন নিয়োগ দিলে তাদের তো আর সেসব বেনিফিট দিতে হবে না। কারখানাগুলো এ ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে মাঝারি ও ছোট আকারের কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে। বিজিএমইএ’র বড় কারখানা তো বন্ধ হওয়ার কথা নয়। তারা অন্য কারণে হয়তো কারখানা বন্ধ করেছে। আর এখন ছোট কারখানাগুলো ধীরে ধেীরে খুলতে শুরু করেছে। কিছু কারখানায় টুকটাক নিয়োগও হচ্ছে। তবে এখনো তেমনভাবে নিয়োগ শুরু হয়নি।’
কারখানা বন্ধ গার্মেন্টস কারখানা নতুন নিয়োগ পোশাক কারখানা পোশাক খাত বিজিএমইএ