চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত কমলেও সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে
২৮ আগস্ট ২০২০ ২০:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কমলেও সংকটাপন্ন রোগী বাড়ছে। এসব রোগীর অধিকাংশই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এর ফলে হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যায় রোগী বেড়েছে।
চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকেরা এমন অভিমত দিয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শুরুতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ রোগী অর্থাৎ জটিলতা কম এমন রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগী বেশি।
তাদের মতে, সচেতনতার অভাব, শুরু থেকে করোনাকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং সংক্রমণের পরও হাসপাতালে না গিয়ে বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাসায় অবস্থান করায় এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত চট্টগ্রামের প্রথম চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যায় এখন রোগীর তেমন চাপ নেই। তবে শুরুতে এই হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়াই সংকট ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ মিলে রোগী রয়েছে ৫০ জন। তার মধ্যে ১০ জনই আইসিইউতে।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জামাল মোস্তফা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে রোগীর চাপ কমেছে। তবে সংকটাপন্ন রোগী বেড়েছে। আইসিইউ শয্যা খালি থাকছে না। হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলাও ব্যবহার করতে হচ্ছে। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেক রোগীর অবস্থাই সংকটাপন্ন।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে একসময় সর্বোচ্চ রোগী থাকতো ১৭০ জনের মতো। এখন উপসর্গ ও করোনা পজেটিভ মিলিয়ে রোগী থাকছে গড়ে ১০০ জনের মতো। তবে খালি থাকছে না হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা। শুক্রবার (২৮ আগস্ট) চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ছিল ছয়জন।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এখন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ রোগীর চেয়ে সিরিয়াস রোগী বেশি। এখন রোগীদের হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা, আইসিইউ এবং ডায়ালোসিস সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৯৪ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। সেখানেও আইসিইউতে আছেন ৪২জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৮৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ১০৪ জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। সংক্রমণ হার ১২.৭১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট পজিটিভ রোগী ১৬ হাজার ৮৬৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬৭ জন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী মোট সংক্রমণ হার প্রায় ২২ শতাংশ।বিপরীতে সুস্থতার হার ৭৩ শতাংশ।
জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালে যারা আসছেন তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগী বেশি। এ অবস্থায় সচেতনতামূলক যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলো মেনে চলার বিকল্প কিছু নেই। যারা সুস্থ হয়ে গেছেন, তাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
আইসিইউ এইচএফএনসি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র সংকটাপন্ন রোগী হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা