Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাকসিন কিনে আনতে হলে ‘চুরি-চামারি’ হবে— আশঙ্কা ডা. আবদুল্লাহ’র


৩০ আগস্ট ২০২০ ০৩:৪২

ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর— স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্বশীল এই দুইটি সংস্থার বিরুদ্ধেই ‘চুরি-চামারি’সহ সব ধরনের অভিযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। ফলে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন কিনতে হলে সেখানেও ‘চুরি-চামারি’ হতে পারে বলে আশঙ্কা তার।

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আনলে যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা না হয়। কারণ অমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অবস্থা লণ্ডভণ্ড। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অযোগ্যতা, অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা, চুরি-চামারি— এমন কোনো অভিযোগ নেই, যা এদের বিরুদ্ধে নেই। দেখা যাবে, ভ্যাকসিন টাকা দিয়ে কিনতে হলে সেখানেও চুরি-চামারি হবে। তাই দেশে ভ্যাকসিন এলে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের জন্য নতুন একটা সুযোগ হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৯ আগস্ট) রাতে সেন্টার ফর সোস্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিচার্স ফাউন্ডেশনের (সিসার্ফ) উদ্যোগে ‘সারাবাংলা লাইটহাউজ’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত এই আয়োজনের এ পর্বের বিষয় ছিল— ‘ভ্যাকসিন: করোনায় আশার আলো’। শবনম আযীমের উপস্থাপনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ভ্যাকসিন আনতে টাকা-পয়সা না লাগলেই সবচেয়ে ভালো। টাকা-পয়সা লাগলে আবার চুরি-চামারি করবে। এক টাকা দিয়ে এক কোটি টাকা বিল করবে। এই কাজগুলোই করবে, আমাদের তো এই স্বভার রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেন আর স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেন, কেউ ভালোভাবে কাজ করতে চায় না। তারা কেবল ঘরে বসে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। রোগী দেখি আমরা (ডাক্তার), পরিস্থিতি মোকাবেলা করি আমরা। তারা ঘরে বসে সুন্দর সুন্দর কথা বলতেই পারেন। কিন্তু প্রাকটিক্যালি কেউ সুন্দর সুন্দর কাজ করেন না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন এলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। তারা মানুষকে দেখিয়ে দিতে পারে যে তাদের দক্ষতা রয়েছে। সেজন্য তাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, ভ্যাকসিন এলে তারা কী কী করবে। ভ্যাকসিন কিভাবে সংরক্ষণ করবে, কোথায় রাখবে, কাদের অগে দেওয়া হবে, কিভাবে দেওয়া হবে— এসব বিষয়ে এখনই কাজ করতে হবে। তা না হলে ভ্যাকসিন এনে কোথায় রাখবে, কিভাবে রাখবে— সেসব নিয়েই সমস্যা তৈরি করবে।

বর্ষীয়ান এই চিকিৎসক বলেন, চীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে বলে গেছে করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ট্রায়াল তারা বাংলাদেশে দেবে। সরকারও তার অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন দিতে কিছুটা দেরি হলেও আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কারণ এটি ভালো উদ্যোগ। বাংলাদেশে ট্রায়াল হয়ে কয়েক হাজার লোক এতে যুক্ত হবে। আমরা জানতে পারব, ভ্যাকসিনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না কিংবা এটি কতটা কার্যকর। আবার চীনের টিমের সঙ্গে আমাদের কিছু টেকশিয়ান ও সহযোগী থাকবে। এতে করে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।

ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, অন্য যারা ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে, তারাও যদি চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রায়ালের সুযোগ চায়, সেই সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তাতে করে আমরাও যাচাই-বাছাই করে দেখার সুযোগ পাব। যে ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও দামে কম হবে— আমরা সেটাই বেছে নেব। চীন দিলে তাদেরটাই নিতে হবে, এমন কোনো কথা না। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে, জনগণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনায় নিয়ে সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিন যেটি হবে, সেটিই অমাদের গ্রহণ করতে হবে।

চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল হবে বলে এই ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণ পর্যায়ে এলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে বলেও মনে করেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে চীন বিনামূল্যেও এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আবার মাথাপিছু আয় বিবেচনায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ বিনামূল্যে পেতে পারে। ডা. আব্দুল্লাহ বলছেন, এ ক্ষেত্রে এখন থেকেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, স্কুল-কলেজ, তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। ফলে এই মুহূর্তে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা ঠিক হবে না। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হবে। আমাদের সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। তবে যাই করি না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানা কোনো কঠিন কাজও না।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় দুইশ ভ্যাকসিন বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রায়ালে আছে। এর মধ্যে ৯ থেকে ১১টি ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে যেটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম, সেটিই অনুমোদন পাবে। আমরাও সেটিই নেবো।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে যেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ, কেবল সেগুলোরই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া যেতে পারে। আর সব ধাপ শেষে যে ভ্যাকসিনগুলো বাজারে আসবে, তার মধ্যে যেটির দাম সবচেয়ে কম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম, মানে ভালো— সেই ভ্যাকসিনটিই বাংলাদেশে অনা হবে। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়— এমন কোনো ভ্যাকসিন আমরা নেব না।

ডা. আলমগীর বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, আগামী অক্টেবর-নভেম্বর মাসে গিয়ে ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। ট্রায়াল শেষ করে এর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে করতে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগবে। ফলে ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসার বিষয়ে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, যারা ভ্যাসসিন উৎপাদনে সক্ষম, তারা ফ্রি ভ্যাকসিন পাবে না। তাদের ভ্যাকসিনর কিনতে হবে। আর যারা উৎপাদনে সক্ষম না, তারা ভ্যাকসিন ফ্রি পাবে। আমরাও সম্ভবত ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাব।

আইইডিসিআর করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ ডা. এ এস এম আলমগীর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ভ্যাকসিন সারাবাংলা লাইটহাউজ স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর