‘জাতির পিতার মতো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রক্ত দিতে প্রস্তুত’
৩০ আগস্ট ২০২০ ১৩:৩৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে চলেই অভ্যস্ত। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা সবসময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। যেভাবে জাতির পিতা তার রক্ত দিয়ে গেছেন, আমরাও রক্ত দিতে প্রস্তুত বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।’
রোববার (৩০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে মিলাদ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে। তিনি যে পথ আমাদের দেখিয়ে গেছেন। তিনি যে নির্দেশনাগুলি দিয়ে গেছেন। আমরা যদি সেটুকু মেনে চলি, এ দেশকে নিশ্চয়ই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারবো।’
‘আমি জানি, বাবা-মা সব হারিয়ে আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছিল রিফিউজি হিসাবে। ১৫ আগস্টে যে কয়টা বাড়িতে আক্রমণ করেছে, তারাও কিন্তু ঢাকা শহরে টিকতে পারেনি। সেখানে খুঁজে বেড়িয়েছে তাদেরকে। যারাই বেঁচে ছিল; এই পরশ-তাপস থেকে শুরু করে প্রত্যেকে, সবাইকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল ভারতে।’
‘তারপর আস্তে আস্তে ছয় বছর পর দেশে ফিরে আসি। সেটাও আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলাম আমার দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেয়েছিলাম। অনেক বাধা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও আমি ফিরে আসতে পেরেছিলাম। একটা লক্ষ্য সামনে নিয়ে যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা তার সারাটা জীবন জেল জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং নিজের জীবনটা দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাই। তার সেই আদর্শটা বাস্তবায়ন করা, তিনি যে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালিকে জাতি নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালি জাতিকে বিশ্বে একটা মর্যাদার আসন দিতে চেয়েছিলেন। বাঙালি জাতির জীবন উন্নত সমৃদ্ধশালী করতে চেয়েছিলেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই আমরা করতে চাই, সেটাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি’-বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা বারবার আমাকে ভোট দিয়ে আমাদেরকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমি সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। এটাই তো সব থেকে বড়। কাজেই আমি আমার নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছি দেশের মানুষের কল্যাণে। একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি আমাদের মাঝে নেই। তার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। যে স্বাধীনতার জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তা মুছে ফেলেছিল। ৭ মার্চের ভাষণ এই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ছবি কোথাও দেখানো যেত না। এমনকি পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দেয় নৌকারই অস্তিত্ব থাকবে না। এরকমও প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। এই ঘৃণ্য চক্রান্ত ষড়যন্ত্র যারা করেছে; জনগণ তাদের চেনে। খুনীদের যারা পুরস্কৃত করেছে, তারা এদেশের স্বাধীনতা কখনো চায়নি।
কাজেই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন করা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেটা যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়, সেটাকে সফল করে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আর উন্নত করা।’
‘ইনশাল্লাহ, আমরা তা করতে পারবো। করোনাভাইরাসের কারণে হয়ত সাময়িক কারণে একটু বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তো আজকে ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। মানুষের ঘরে খাবার আছে। আমরা বন্যা মোকাবিলা করেছি, ঝড় মোকাবিলা করেছি। করোনা মোকাবিলা করে চলছি। হয়ত প্রতিবন্ধকতা আছে! এভাবেই চলতে হবে। আমরা সেই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে চলেই অভ্যস্ত। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা সবসময় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। যেভাবে জাতির পিতা তার রক্ত দিয়ে গেছেন। আমরাও রক্ত দিতে প্রস্তুত বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী।