দলছুটদের দলে না টানতে হুশিয়ারি শেখ হাসিনার
৩০ আগস্ট ২০২০ ১৫:০৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে এদিক-ওদিক থেকে কিছু লোক জোটে। দলের ভিতরে এসে তারা নানারকম অঘটন ঘটায়। যেটা দলকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। যে কারণে আমি শুরুর দিকে আমাদের নেতাকর্মীদের হুশিয়ার করেছিলাম; যে এই ধরনের যারা বিশেষ করে মিলিটারি ডিটেকটরদের হাতে তৈরি করা যে সমস্ত রাজনৈতিক দল সেগুলি যারা করে এসেছে বা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যারা ছিল। আমাদের দলে যেন তারা না আসে। আমাদের দলের কেউ কেউ দল ভারী করার জন্য তাদেরকে টেনে নেয়, কাছে টেনে নেয়। এটা নেওয়া আমাদের জন্য সত্যিই খুব ক্ষতিকারক।’
রোববার (৩০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে মিলাদ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ১৫ আগস্টের পর প্রথম উপলব্ধি করেছে যখন আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর সরকার গঠন করেছে। তখনি তারা অন্তত সরকার যে জনগণের সেবক; তাদের সেবা তাদের কল্যাণে কাজ করে, সেটা একমাত্র তখনি তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। আমরা সেই আদর্শ বুকে নিয়েই কাজ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমর্থন আছে, জনগণ আছে, আমাদের সংগঠন আছে। বাংলাদেশে একমাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগ; তৃণমূল পর্যায় আমাদের সংগঠন সুসংগঠিত। কাজেই সেইভাবেই আমাদের আদর্শভিত্তিক সংগঠনই আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আর আওয়ামী লীগ আছে বলেই দেশ উন্নত হচ্ছে।’
‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সমস্ত আয়োজন নিয়েছিলাম। ২০২০ থেকে ২০২১ সাল আমাদের লক্ষ্য; এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আমাদের লক্ষ্য ছিল মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না’-বলে পূর্ণব্যক্ত বরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যখন আমরা সমস্ত কাজগুলি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন আসল করোনাভাইরাস। এটা খালি বাংলাদেশ না সারাবিশ্বব্যাপী। এই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে আজকে বাংলাদেশ তো বটেই সব দেশেই আজকে কিন্তু স্থবির। তার মধ্যেও আমরা আমাদের সীমিত সম্পদ নিয়েও কাজ অব্যাহত রাখতে পারছি। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান কলকারখানা যাতে যথাযথভাবে চলতে পারে তার জন্য নানা ধরনের প্যাকেজ আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের বলতে গেলে জিডিপির ৪ শতাংশ শুধু দিয়ে যাচ্ছি যাতে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো যেন সচল থাকে। যেজন্য বিভিন্ন প্যাকেজে সহায়তা করে যাচ্ছি।’
করোনাকালে অব্যাহত বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেজন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও ভূয়ংসী প্রশংসা করেন। একসঙ্গে সবাইকে মাস্ক পরে থাকা, স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, এটা কিন্তু আমাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে, এটা এমন একটা ভাইরাস যেটা কেউ চোখে দেখতে পায় না। কিন্তু এর ফলে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে যে, মৃত্যুহার কমিয়ে আনা। সংক্রামণটা যাতে কমে তার ব্যবস্থা করা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সব ধরনের সহযোগিতা করা। সেই ক্ষেত্রে আমাদের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদেরকে সহযোগিতা করেছে। সেই সাথে সরকারি বেসরকারি প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, আনসার বিজিবি বাহিনী থেকে সবাই। এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করার এটাই তো জাতির পিতার শিক্ষা। এটাই তো তার আদর্শ। আর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই তো আমরা রাজনীতি করি। কাজেই আমাদের সেটা নিয়েই চলতে হবে। দেশের সেবা করতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী।