ভর্তির অপেক্ষায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী, বই ছাপা হচ্ছে ৭ লাখ সেট!
৩০ আগস্ট ২০২০ ২৩:১৪
ঢাকা: এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লাখের মতো শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন জমা দিয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের আরও দুই দফায় আবেদনের সুযোগ রয়েছে। অথচ একাদশে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা এসব শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য ছাপা হচ্ছে তিন বিষয়ের মাত্র সাত লাখ সেট বই। এই সাত লাখ সেটে বাংলা, ইংরেজি ও সহপাঠের ২২ লাখ বই ছাপা হবে। ২৬ আগস্ট এসব বই ছাপার কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সারাবাংলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বই ছাপানো দরপত্র হয়েছে আগস্টের ২৬ তারিখে। সব মিলিয়ে ২২ লাখ বই ছাপা হবে। আগামী দু’মাসের মধ্যেই সব বই ছাপিয়ে ফেলা সম্ভব।’
এসএসসিতে প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর পাস এবং একাদশে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখেরও বেশি শিক্ষর্থীর ভর্তি আবেদনের পরও কেন এত কম বই ছাপানো হচ্ছে?— এমন প্রশ্নের জবাবে নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রথমেই সবার বই প্রয়োজন পড়বে না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেও অনেক শিক্ষার্থী বই কিনে পরীক্ষা দেয়। ততদিনে প্রয়োজনীয় বই ছাপিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
বই ছাপাতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিক-মাধ্যমিকসহ সব বই একসঙ্গে ছাপাতে গিয়ে তিন দফা পিছিয়েছে দরপত্র। তিন দফা পেছানোর কারণ ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (আইসিটি) বিষয়ের বইটি!
সূত্র বলছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের বইটি বেসরকারি প্রকাশকদের কাছ থেকে এনে সরকারি তত্ত্বাবধানে বিপণনের উদ্যোগ নেয়। তবে এজন্য প্রকাশকদের সঙ্গে করা পুরানো চুক্তিটি বাতিল না হলে কয়েক প্রকাশক উচ্চ আদালতে দুটি মামলা করেন। ফলে বই মুদ্রণের দরপত্রও তিন দফায় পেছায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইসিটি বইটি সরকারি তত্ত্বাবধানে আনার উদ্যোগ বাদ দিয়েই দরপত্র হবে বলে জানা গেছে। তাই ২৬ আগস্ট সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা আগের তিনটি বই ছাপার দরপত্র হয়ছে।
বাংলা, ইংরেজি এবং সহপাঠ প্রতিটি বিষয়ের ১০ লাখ করে ৩০ লাখ বই মুদ্রণ করতে চেয়েছিল এনসিটিবি। তবে দরপত্র কম পড়ায় সেটিও করা সম্ভব হচ্ছে না। তিন বিষয় মিলিয়ে ২২ লাখেরও মতো বই ছাপা হবে। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকে এবার বই সংকটের আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৭১৩ জন ভর্তির আবেদন করেছে। বাকি থাকা শিক্ষার্থীরা আরও দুই দফায় আবেদন করবেন। সেক্ষেত্রে এই শিক্ষাবর্ষে বইয়ের সংকট হবে। এছাড়াও বাড়বে নকল বইয়ের দৌরাত্ম। যাতে সরকার হারাবে মোটা অংকের রাজস্ব।
নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বই সংকট যেন না হয় সে জন্য ক্লাস শুরুর আগেই বই বাজারে দিতে চাচ্ছি। করোনার কারণে অনেক কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। তাছাড়া মামলা জটিলতা ছিল। বই সংকট যেন না হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি।’
প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিকে মোট পাঠ্যবই ৩৯টি। এর মধ্যে এতদিন বাংলা, ইংরেজি ও বাংলা সহপাঠ- এই ৩টি বিপণন করে আসছে সরকার। বাকি ৩৬টি বইয়ের কারিকুলাম সরকার তৈরি করে দিলেও এর ছাপা ও বিক্রয় হয় বেসরকারি উদ্যোগে।
১৭ লাখ শিক্ষার্থী ২২ লাখ বই ইংরেজি একাদশ শ্রেণি এনসিটিবি নারায়ণ চন্দ্র সাহা বই বাংলা সহজপাঠ