ধুনট হাসপাতালে দু’দিনের বেশি রোগী রাখেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
৩১ আগস্ট ২০২০ ০৯:১২
বগুড়া: করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই দিনের বেশি কোনো রোগীকে ভর্তি রাখছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। এছাড়া জরুরি কোনো রোগী এলেই তাকে রেফার্ড করা হচ্ছে জেলা সদরের অন্য হাসপাতালে। এছাড়া কর্মস্থলেও থাকেন না চিকিৎসকরা। এসব কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধুনট উপজেলার প্রায় ৫ লাখ জনগোষ্ঠির জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও মাত্র ১০ জন কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ চিকিৎসকই কর্মস্থলে থাকেন না। আর যে কয়েকজন কর্মস্থলে থাকেন, তারা বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখতেই বেশি সময় ব্যস্ত থাকেন।
এছাড়া এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে দীর্ঘদিন অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার সরকারি যত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক্সরে মেশিনটি একদিনের জন্যও চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ইসিজি মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও জনবলের অভাবে মেশিনগুলো দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে কোনো জরুরি রোগীকে এখানে ভর্তি করানো হয় না। জরুরি রোগী এলেই তাকে রেফার্ড করে বগুড়ায় পাঠানো হয়।
এরমধ্যে আবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির ‘অজুহাত’ তুলেছেন চিকিৎসকরা। তাই যেকোনো রোগীকে দুই দিনের বেশি সময় হাসপাতালে ভর্তি না রাখতে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে দিয়েছেন ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসানুল হাছিব। গত বুধবার (২৬ আগস্ট) প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত এক শিক্ষককে দু’দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘটনার মধ্যদিয়ে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার নাজেহাল অবস্থার করুণ চিত্র আবারও ফুটে উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা পেশায় একজন শিক্ষক। গত ২৬ আগস্ট প্রতিপক্ষরা তার মাথায় ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে মারপিট ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্বজনেরা।
আহত গোলাম মোস্তফার বাবা শাজাহান আলী বলেন, ‘আমার ছেলের মাথার ফাঁটা স্থানে ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার মাথা ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে এখনও ব্যথা রয়েছে। কিন্তু ধুনট হাসপাতালের ডাক্তার আমার ছেলেকে সুস্থ না করে দুই দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। তারা বলেছে, ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মিলটন সরদার বলেন, ‘করোনা সংক্রামণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসানুল হাছিব বলেন, ‘হাসপাতালে নানা রোগী আসেন। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যদি কেউ বাড়ি চলে যেতে যায় তাহলে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কাউকেই জোর করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ‘ধুনট হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকই দুপুর ১টার আগেই চলে যান। এ বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবগত করলেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেনি। তাই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করোনাভাইরাস ধুনট বগুড়া