Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সামান্য ভুলের জন্য ড. বিজনের মতো বিজ্ঞানীরা যেন অপমানিত না হন’


৩১ আগস্ট ২০২০ ১১:২৩

ঢাকা: ‘ভুলটা আমার। ভেবেছিলাম তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক হলেও জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। তাই তাকে নিয়ে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে, এটা নিয়ে এত কিছু হয়ে যাবে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের সামান্য ভুলের জন্য যেন ড. বিজনের মত বিজ্ঞানীরা অপমানিত না হন। তারা আমাদের গর্ব।’— করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবক দলের প্রধান ও অনুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে আর কাজ করতে পারবেন না এমন সংবাদ নজরে আসার পর প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রোববার (৩০ আগস্ট) রাতে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় ‘ওয়ার্ক পারমিট জটিলতায় গণস্বাস্থ্য ছাড়তে হচ্ছে ড. বিজনকে’ শিরোনামে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সারাবাংলা। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘জন্ম বাংলাদেশে হলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল এখন মূলত সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তাই নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজ করতে হলে তার ওয়ার্ক পারমিট থাকতে হবে। কিন্তু তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন টুরিস্ট ভিসায়। ফলে ওয়ার্ক পারমিট জটিলতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবক দলের প্রধান এই বিজ্ঞানী গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে আর কাজ করতে পারবেন না। এমনকি ড. বিজন কুমারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি স্থগিত করে চিঠি ইস্যু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’— এ বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি রাতে সারাবাংলাকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন।

বিজ্ঞাপন

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা ভুল হয়েছে। বরং ভুলটা আমারই। ড. বিজন বাংলাদেশি নাগরিক। তাকে আমি চিনি বহু বছর ধরে। তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৫০০ গজ দূরেই এক সময় সরকারি চাকরি করেছেন। তাই আমি ভাবিনি এটা জটিলতা তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশই আছে যে দুই দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু সিঙ্গাপুর এমন একটা দেশ, যেখানে দুই দেশের নাগরিকত্ব রাখা যায় না। তাই ড. বিজন যখন সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেন তখন তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সমর্পণ করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। কারণ তিনি নাগরিকত্ব ছাড়লেও কি আসে যায়। বাংলাদেশে তো পাঁচ লাখের মত ভারতের লোক চাকরি করছে। তাদের অনেকই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছে। যদিও দুর্ভাগ্যবশত ড. বিজনের বিষয়টি আমাদের নজরেও পড়েনি। এ ভুলটা আমি করেছি। কিন্তু পরে যখন আমাদের নজরে এসেছে, তখনই আমরা সরকারের কাছে উনার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেছি।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই ট্রাস্টি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু আমরা যেহেতু ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেছি, সেহেতু তাকে বরখাস্ত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাকে বরখাস্ত তো দূরের কথা, তার মতো লোককে নিয়োগপত্র দিতে পারাটাই একটা দেশের জন্য সম্মানের ও গর্বের বিষয়। ড. বিজন আমাদের এখানে জয়েন করার ফলে অনেক দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে চাইছে। ড. বিজন আমাদের দেশের জন্য সম্পদ। শুধুমাত্র ওয়ার্ক পারমিট নেই বলে যে তাকে এত বড় অসম্মান করা হবে, এটার প্রশ্নই আসে না। আমরা এই জটিলতা কাটাতে গত ১০ আগস্ট ভিসার আবেদন করেছি। আশা করি, এ সপ্তাহের মধ্যেই উনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেয়ে যাব। ভিসা না পাওয়ার মতো কোনো জটিলতা আমরা দেখছি না। এটা খুব সামান্য বিষয়।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তার ভিসার বিষয়ে আমি হোম মিনিস্ট্রিতে কল করেছিলাম। তারা শুনেই বলল, না না আপনাকে আসতে হবে না। আমরাই ব্যবস্থা করছি। ভিসা আগেই এক বছরের দিয়েছে। কিন্তু সেখানে একটা গৎবাধা লেখা ছিল যে, কোনো কাজ করতে পারবেন না। যদিও সেসময় জটিলতা হয়নি। কিন্তু এখন যেহেতু হচ্ছে, সমাধানও হবে।’

তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার একটি আবেদন যে, তার মতো লোকের এ দেশে প্রয়োজন। তাকে যেন কোনোভাবেই অসম্মান না করা হয়। তাদের মত বিজ্ঞানীরা আমাদের জন্য সম্মানের।’

‘তবে কিছু লোক আছে, তারা ভাবছে ড. বিজনকে তাড়াতে পারলে আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে, গণস্বাস্থ্যকে শান্তি দেওয়া হবে। এই আরকি।— আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন ড. জাফরুল্লাহ।

তবে যারা এমন অপচেষ্টা করছে তাদের কর্মকাণ্ডে আপাতত কোনো প্রতিবাদও নেই বলে জানালেন ড. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখানে আমারও একটা ভুল আছে, তাই আমি এটা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করছি না। যদিও আমি জানি কেউ না কেউ সুযোগ খুঁজছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. লাইলা পারভিন বানু কল রিসিভ করেননি। তবে বেসরকারি এক টেলিভিশনকে তিনি জানিয়েছেন, ড. বিজন জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। অর্থাৎ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

নতুন করে আবেদনের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান ড. বিজন। আপাতত আবেদনের প্রতিত্তোরের অপেক্ষায় আছেন তিনি। জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবক টিমের সমন্বয়ক ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ড. বিজনের যে সমস্যাটি হয়েছে, এটি একেবারেই সামান্য একটি বিষয়। খুব শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘উনাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তখন নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয়। জমা দেওয়ার পর উনারা গত জুলাই মাসে জানান, যে আমরা যেভাবে নিয়োগ দিয়েছি সেটা ভিন্ন প্রসিডিউর। তাই নিয়ম অনুযায়ী বিডার (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এটা জানার পর আমরা বিডার মাধ্যমে আবেদন করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা পারমিট পেয়ে যাব। না পাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। কেননা, ড. বিজন তো আর কোনো অপরাধী না যে উনার ওয়ার্ক পারমিট আটকে থাকবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপাতত ড. বিজনের চাকরি স্থগিত রেখেছে। যেটা অফিসিয়াল নিয়ম। কিন্তু উনি ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে গেলে ফের চাকরি করতে পারবেন। তবে তিনি যে কোভিড-১৯ প্রকল্পে করোনা কিট উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন তাতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ওই প্রকল্পে বাকি আর যারাই কাজ করছেন সবাই ভলান্টিয়ার হিসেবেই আছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ড. বিজনও কিন্তু এদেশে ভলান্টিয়ার হিসেবে আছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি ওয়ার্ক পারমিট পাচ্ছেন।’ এজন্য করোনার কিট উদ্ভাবনী প্রকল্পে তার অংশগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার।

কিট উদ্ভাবন গণস্বাস্থ্য ড. বিজন কুমার র‌্যাপিড কিট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর