সড়ক সংস্কার ‘শিখতে’ও বিদেশ যেতে হবে ১৬ কর্মকর্তাকে!
৩১ আগস্ট ২০২০ ১৩:৪৮
ঢাকা: থামছেই না বিদেশ সফরের আয়োজন। উন্নয়ন প্রকল্প মানেই প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণের হিড়িক। এবার ‘সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে বিদেশ যাবেন ১৬ কর্মকর্তা। এদের প্রত্যেকের পেছনে খরচ হবে পাঁচ লাখ করে টাকা। এজন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া পরামর্শকের পেছনে যাবে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে বিদেশ সফর নিয়ে কিছু না বললেও পরামর্শক ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
যদিও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৩০০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৪০ কিলোমিটার চার লেন ব্যতীত সড়ক নির্মাণ, ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন বা পুনর্বাসন, ৭ হাজার মিটার ফ্লাইওভার বা ওভারপাস নির্মাণ, ১৪ হাজার ৮০০ মিটার সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ এবং ৬ হাজার ৮০০ মিটার সেতু বা কালভার্ট পুনর্নির্মাণ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেসমেন্ট ব্যংকের (এআইআইবি) ঋণ থেকে দুই হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ঋণের এ অর্থ পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরের পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পার্শ্বে ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত হবে। ফলে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডোরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া বন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজতর হবে। সেই সঙ্গে পর্যটন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারি এই ঋণের বিষয়ে এআইআইবি’র সঙ্গে নেগোশিয়েশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলে ঋণ চুক্তি সই হবে।
বিদেশ সফর ও পরামর্শক খরচ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক জেষ্ঠ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার যেখানে ব্যয় সাশ্রয় করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। সেখানে বিদেশ ভ্রমণের মতো ব্যয় পরিহারের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের নামে এসব সফর কতটুকু দেশের কাজে লাগে সেটিও মূল্যায়নের সময় এসেছে। শুধু শুধু টাকা খরচ করে লাভ নেই। আর পরামর্শক ব্যয়ও যৌক্তি পর্যায়ে কমিয়ে আনা উচিত।’
প্রকল্পটির প্রস্তাবিত বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্মাণ তদারকি পরামর্শক সেবা খাতে ৯৩৬ জনের মাসিক খরচ বাবদ ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং এআইআইবি’র ঋণ থেকে ৪৯ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া এনজিও সেবায় ৫৯৫ জনের মাসিক (সরকারি খাত) ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। প্যানেল অব এক্সপোর্ট সেবার জন্য ৬০০ জনের দৈনিক ব্যয় ধরা হয়েছে (সরকারি খাত) ৬০ লাখ টাকা।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়, পরামর্শকের পুনঃপর্যালোচনা করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে। সেই আলোকে প্রস্তাবিত পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় প্রক্কলন করতে হবে। এছাড়া কনসালটেন্সি সার্ভিস ফর ভ্যালিডেশন অব ট্রাফিক মডেল অ্যান্ড রুটিন ফাইনালাইজেশন ফর ঢাকা ইনার সার্কুলার রোড কনস্ট্রাকশন খাতে প্রস্তাবিত ৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বাদ দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেও পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে-১,এশিয়ান হাইওয়ে-২,বিমসটেক করিডোর-৩ এবং সার্ক করিডোর-৫ এর অংশ। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এটির উন্নয়ন হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের ক্রসবর্ডার সংযোগ স্থাপনসহ উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এই মহাসড়কটি উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগর প্রধান করিডোর। সড়কটির উন্নয়নের ফলে যাত্রী ও মালামাল দ্রুত এবং নিরাপদে পরিবহন সহজ হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একনেক পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)