প্রণব মুখার্জি আর নেই
৩১ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩৫
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মারা গেছেন। সোমবার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দিল্লির আর্মি’স রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি এক টুইটে পিতার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন। ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ ভূষিত প্রণবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শোকবার্তা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ছেলে অভিজিৎ টুইটে লিখেছেন, বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সবাইকে জানাচ্ছি— হাসপাতালে টিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং গোটা ভারতের সব মানুষের সবার দোয়া ও প্রার্থনাকে অতিক্রম করে আমার বাবা প্রণব মুখার্জি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার পাশে থাকার জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে কেবল রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, গোটা ভারতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জননন্দিত এই রাজনীতিকের প্রয়াণ ভারতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করছেন রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষেরাও। এমন নির্ভেজাল ও দেশপ্রেমিক একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়ে বেদনাহত তারা।
এদিকে, প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে ভারতে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রণব মুখার্জির প্রয়াণকে স্মরণ করে ৩১ আগস্ট থেকে শুরু করে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। এই সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। প্রণব মুখার্জির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ ও স্থান পরবর্তী সময়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।
গত ৯ আগস্ট পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও পরে স্নায়বিক জটিলতায় ভুগছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ পরদিন ১০ আগস্ট দিল্লির আর্মি’স রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এমআরআই স্ক্যানে তার মস্তিষ্কে জমাট বাধা রক্ত শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। সেদিন রাতেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জমাট বাধা রক্ত বের করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
এদিকে, সোমবার হাসপাতালে যাওয়ার পরপরই প্রণব মুখার্জির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে তার শরীরের করোনাভাইরাসেরও অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এদিন বিকেলে তিনি নিজেই টুইটারে এ খবর জানিয়েছিলেন।
ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০১২ সালে দায়িত্ব নেন প্রণব। ২০১৭ সালে সে দায়িত্বের মেয়াদ পূর্ণ করেন তিনি। এরপর অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, রাজস্ব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের বিরল নজির রেখেছেন। বাঙালি এই রাজনীতিবিদ ভারতের ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস দলের অন্যতম ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ নেতা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। দলীয় সে পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠেই ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রণব মুখার্জি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তি।
আরও পড়ুন-
প্রণব মুখার্জির স্বাস্থ্যের অবনতি, এখনও ভেন্টিলেশনে