শত কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া, আদায়ে অভিযানে নামছে ডিএনসিসি
১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:৫৮
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) পরিশোধ করে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার ভবন মালিক। এসব ভবন মালিকদের থেকে সংস্থাটির প্রতি বছর গড়ে হয় প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। কিন্তু সর্বশেষ আর্থিক বছরের হিসাব অনুযায়ী এ খাতে ডিএনসিসির আয় হয়েছে মাত্র তিনশ কোটি টাকা। অবশিষ্ট প্রায় দেড়শ কোটি টাকাই বকেয়া পড়ে আছে। এতে করপোরেশনের আর্থিক ব্যয় মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। তাই এসব বকেয়া টাকা আদায় করতে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করে মাঠে নামছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতে হোল্ডিং ট্যাক থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে আদায়কৃত হোল্ডিং ট্যাকের অর্থ দাঁড়ায় মাত্র তিনশ কোটি টাকা। এতে বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। আর এসব বকেয়া টাকার মধ্যে বাড়ির মালিকদের চেয়ে অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। এমনকি প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি সরকারি এবং আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেই পাওয়া রয়েছে শত কোটি টাকা। আর এভাবেই বছরের পর বছর অপরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্সে ডিএনসিসির সেবা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠাগুলো।
ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চেষ্টা করি ৬০-৭০ শতাংশ ট্যাক্সের অর্থ আদায় করতে। বাকি ৩০-৪০ শতাংশ পরের বছর আদায় করার লক্ষ্য থাকে। কিন্তু ডিএনসিসির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে শত শত কোটি টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে। এভাবে তো একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তাই আমরা এবার কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছি। মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ডিএনসিসির সংগ্রহ এলাকায় একযোগে চিরুনি অভিযান চালিয়ে আমরা দেখবো কারা কারা ট্যাক্স দিয়েছে আর কারা কারা দেয়নি। যারা এতদিন দেয়নি তাদের থেকে ট্যাক্স আদায় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় সরকারি যেসকল মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা রয়েছে তাদের অধিকাংশের ট্যাক্স ফি বকেয়া। বিশেষ করে রাজউক, হাউজিং, ডেসকো, ওয়াসা, উত্তরা হাইস্কুল, রাজউক হাইস্কুল, ইউনাইটেড হসপিটাল। এদের কাছ থেকেই তো বকেয়া আছে শতকোটি টাকার উপরে। আবার নতুন করে যেসব ভবন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তারাও হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতাভুক্ত হয়নি। সেই সঙ্গে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার গুলশান বনানীতে যত বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে তাদের কারোই লাইসেন্স নেই। তাদের নোটিশ করা হলেও কোনো সাড়া নেই। তাই এবার কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের মেয়র। দেখা যাচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠানকে বৈধ মনে হয়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে আমরা লাইসেন্স দিইনি। কিন্তু তারা ঠিকই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করতেছে। এতে তো আমরা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছি, এবার তাদেরকে নিয়ন্ত্রনের সময় এসেছে।’
তবে অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে ডিএনসিসির নগর ভবন ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে। এতে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে ডিএনসিসি। তাই এবার সেসব অসাধু কর্মকর্তাদেরকেও শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটিতে থাকতে হলে সবাইক ট্যাক্স দিতে হবে। কেউ ট্যাক্স দেবে, কেউ ট্যাক্স দেবে না এটি কিন্তু হবে না। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি সিটিতে অনেকেই ডিএনসিসির সুবিধা নিয়ে থাকে কিন্তু ট্যাক্স দিচ্ছে না। সে সুযোগ আর থাকছে না। এখন থেকে কঠোর অবস্থানে আমরা। তবে আমরা ট্যাক্সের রেট বাড়াবো না। কিন্তু যারা এর আওতাভুক্ত ছিল না তাদের আওতাভুক্ত করবো এবং যারা বকেয়া রেখেছে তাদের সে পাওয়া পরিশোধ করতে হবে। এজন্য আমরা একযোগে চিরুনি অভিযানে নামছি।’
তবে কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ট্যাক্স ফাঁকি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মেয়র বলেন, ‘বহু গ্রুপ অব কোম্পানি, বড় বড় প্রতিষ্ঠান তারা ট্যাক্স পরিশোধ করছে না। এক্ষেত্রে আমি মনে করি কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কাউন্সিলররা বা রাজনৈতিক যোগসাজসে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছে বছরের পর বছর। কিন্তু আমরা দেখতে চাই এবারের অভিযানের মাধ্যমে যে কারা কারা জড়িত। যদি কাউকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ধরতে পারি তবে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’
বড় বড় প্রতিষ্ঠান যদি এবারও ট্যাক্স পরিশোধে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডিএনসিসির করণীয় কি হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৩২ লাখ ভোটারের রায়ে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। সুতরাং কেউ ভয়ভীতি কিংবা বাধা দিতে চাইলেও লাভ হবে না। আমি মনে করি উপরে আল্লাহ আছেন আর নিচে আছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আমার কাউন্সিলরা। আমি সবাইকে বলেছি আমাদের অনড় থাকতে হবে। কিন্তু যদি কারও কোনো সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে আমার আলোচনার টেবিল সব সময় প্রস্তুত। যদি কারও কোনো দ্বিমত থাকে তবে লেট হিম টক উইথ মি। কিন্তু বাধা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবো। কিন্তু নগর থাকতে গেলে ট্যাক্স দিতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই।’
গৃহকর ডিএনসিসির আয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবন মালিক হোল্ডিং ট্যাক্স