সাতক্ষীরায় পানিবন্দি শত পরিবার, দুর্দশা বাড়ছে বানভাসিদের
২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:১৫
সাতক্ষীরা: যতই দিন যাচ্ছে, ততই জোয়ারের পানিতে ভাসছে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকা। আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদের বেড়ি বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। ধ্বসে পড়েছে শতাধিক কাঁচাঘরবাড়ি। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন দুর্গতরা। টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে গত তিন মাস ধরে চলে জোয়ার-ভাটা। প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেড়ি বাঁধ ভেঙে এতই গভীর হয়ে যায় যে সংস্কার করা এতদিন সম্ভব হয়নি। তার উপর বর্তমান অমাবস্যার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বেশি দেখা যাচ্ছে। গত দুই দিনের জোয়ারে ও প্রবল বর্ষণে যেসব এলাকায় রিং বাঁধ দিয়ে পানি বন্ধ করা হয়েছিল, সেগুলো আবারও ছুটে যায়। এর ফলে জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দূর্গত এলাকায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠী। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।
জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা, দিঘলারাটি, সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, নয়াশ্রীপুর, হরিশখালি, হরিখালী, হিজলিয়া, কোলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, দয়ারঘাট, গাইয়াখালী, ঠাকুরাবাদ, দাশেরাটি, কমলাপুর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, কোলা, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাবুরা ও খলসিখালী এবং কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ দুই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ— পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়ি বাঁধগুলো ঠিক রাখতে পারলে তাদের আজ পানিতে ডুবে মরতে হতো না। তাদের আরও অভিযোগ— সরকারি ত্রাণ যা আসে, তা তাদের অনেকেই পান না। তাই, তাদের দাবি— তারা ত্রাণ চাননা, চান প্রাণে বাঁচতে টেকসই বেড়ি বাঁধ।
এদিকে, সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি ইউনিয়নের বানভাসি মানুষের দুর্দশা বাড়ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বাড়িঘর ছেড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে, বিভিন্ন সড়কে ও বাঁধের ওপর। জোয়ার-ভাটা চলছে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২টি গ্রামসহ আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে। সেখানে একখণ্ড জমিও কোথাও শুকনো নেই। সবই পানিতে নিমজ্জিত। দুর্গত এলাকায় কেউ মারা গেলে মাটি দেওয়ার জায়গাটুকু পর্যন্ত সেখানে নাই।
তার ওপর প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ধ্বসে পড়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমিসহ গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি। রান্না-বান্না ও গৃহস্থালীর কোনো কাজ করতে না পারায় শুকনো খাবারেই দিন কাটাতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর দীর্ঘ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পানিবন্দি প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষেরা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার ওপর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব।
এদিকে, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে স্থানীয় ইউপি চেয়ারর্যানের নেতৃত্বে আবারও হাজার হাজার এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে লেবুবুনিয়া গ্রামের ছয়টি স্থানের রিং বাঁধ সংস্কারের কাজ করছেন। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নে এখনও ১০টি গ্রাম পানিতে নিজ্জিত।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার লেবুবুনিয়া রিং বাঁধ সংস্কারের কাজ পরিদর্শন শেষে জানান, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধগুলোর কয়েকটি স্থান প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের চাপে আবারও ভেঙে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও শ্যমানগর উপজেলার গাবুরা ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নের বেড়িবাধের কয়েকটি পয়েন্টে ভেঙে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দূর্গত এলাকার মানুষ অবর্ণণীয় কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, এরই মধ্যে আশাশুনি ও শ্যামনগরের বন্যা দুর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ২৯০ মেট্রিকটন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায়। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করা করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে গত তিন মাস ধরে চলে আসছে জোয়ার-ভাটা। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ রিং বাঁধ দিয়ে পানি বন্ধ করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও গত অমাবস্যায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে যায় একের পর এক নতুন নতুন এলাকা।
আম্পান ঘূর্ণিঝড় জোয়ারের পানি পানিবন্দি বাঁধ বানভাসি সাতক্ষীরা