Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেয়াদহীন ও নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব, বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি


২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:২৫

ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা বডি লোশন, সাবান, পাউডার ও শ্যাম্পু মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তা ধ্বংস করার কথা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদের নতুন সিল বসিয়ে ফের বিপণন করছে। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনীও বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, নতুন মোড়কে সরবরাহ করা এসব প্রসাধনী দেখে বোঝার উপায় নেই- কোনটি আসল আর কোনটি নকল। বর্তমানে নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আর এসব পণ্য ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী ও উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অভিজাত বিপণিবিতানে মিলছে এসব নষ্ট প্রসাধনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল প্রসাধনী মজুদ করা হচ্ছে। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানেও এসব বাসার সন্ধান পাওয়া গেছে।

গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর সাঈদ নগর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি প্রসাধনী বিপণনকারী এসপিএস করপোরেশন নামে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অভিযান চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময়ে সেখান থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনীতে নতুন করে তারিখ বসিয়ে তারা বাজারে ছাড়ে। এমনকি সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য। এর আগের দিন ২৪ আগস্ট পুরান ঢাকার বংশালে অভিযান চালিয়ে একটি কারখানা থেকে কোটি টাকার নকল প্রসাধনী জব্দ করে মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই। সেখানেও বাসা ভাড়া নিয়ে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা গড়ে তোলে একটি চক্র।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বকে চুলকানি ও চুল পড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ইমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে, রঙের পরিবর্তন হতে পারে, খসখসে হয়ে যেতে পারে, ইনফেকশনের সৃষ্টি হতে পারে। আর মেয়াদোত্তীর্ণ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল পড়ে যায়, মাথার ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এমনকি সেখানে ঘা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এসব প্রসাধনী ব্যবহারে প্রথম চুলকানি শুরু হবে, যেটা আগে কখনো হয়নি। ত্বকে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুসকুড়ি হয়ে যায়, জায়গাটা লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়। সেখান থেকে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এমন অনেক রোগী প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে আসছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব রোগী বাজার থেকে যত্রতত্র ওষুধ কিনে ব্যবহার করে, যা তার ত্বকের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। কিছু ওষুধ আছে, যা এ ধরনের রোগীদের ব্যবহার একদম নিষিদ্ধ। অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেসব ওষুধ ব্যবহার করে।’

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রসাধনীর গায়ে পণ্যটি ব্যবহারের মেয়াদ লেখা থাকে। ক্রেতারা এসব নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য দোকান থেকে কিনে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পণ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য মেয়াদ লেখা দেখে ক্রেতারা পণ্য কেনেন। আমদানি করা এসব পণ্যের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর অবিক্রিত থেকে যায়। বিএসটিআইয়ের বিধিমালা ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে এসব পণ্য বিক্রেতা নিজ উদ্যোগে অথবা সরবরাহকারীর কাছে ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলার কথা। কেননা মেয়াদোত্তীর্ণ বডি লোশন, সাবান, পাউডার ও প্রসাধনী পণ্য ব্যবহারে ত্বক ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দোকানে থাকা এসব অবিক্রিত মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি পণ্য নামমাত্র দামে কিনে সেগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণের সিল বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুছে ফেলে। পরে ওই পণ্যগুলোতে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত সমমানের মেশিনের সাহায্যে নতুন করে তাদের ইচ্ছে মতো ব্যবহারের তারিখ বসিয়ে বিপণিকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করে। এসব পণ্য যে মেয়াদোত্তীর্ণ তা বুঝতে পারে না বিপণি বিতানগুলো। এমনকি ক্রেতারাও বুঝতে পারে না।

সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের একটি দল মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি প্রসাধনী বিপণনকারী একটি অপরাধী চক্রের সন্ধান পায়। গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর সাঈদ নগর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের দুজনের এসপিএস করপোরেশন নামে ওই প্রতিষ্ঠানে মালিকানা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ চক্রের প্রধান সুধীর মণ্ডলের পাঁচতলা ভবনের গুদাম থেকে ইয়ার্ডলি লোশন, ইয়ার্ডলি সাবান, ইয়ার্ডলি পাউডার ও বডি স্প্রেসহ আরও প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া এসব প্রসাধনীর গায়ে থাকা উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তনে ব্যবহৃত রাসায়নিক, কালি ও একটি মেশিন উদ্ধার করা হয়। সুধীর মণ্ডল ও তার সহযোগীরা এসপিএস করপোরেশন নামে কোম্পানি খুলে উইপ্রো এন্টারপ্রাইজ ও হাংকেল কোম্পানির মালামাল বিপণন করে আসছে। এসব আমদানি করা পণ্য রাজধানী ঢাকার গুলশান, বনানী ও উত্তরার অভিজাত বিপণিবিতানসহ ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোর বিভিন্ন দোকানেও বিক্রি করে আসছে।

গত ২৪ আগস্ট পুরান ঢাকার বংশালে অভিযান চালিয়ে একটি কারখানা থেকে কোটি টাকার নকল প্রসাধনী জব্দ করে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই। সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদা আক্তারের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরীর চকবাজার ও বংশাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মামুন নামে এক ব্যক্তির হেয়ার অয়েল কারখানায় নকল প্রসাধনী উৎপাদনের প্রমাণ পাওয়ায় পণ্য জব্দ ও জরিমানা করা হয়। ওই কারখানায় বিএসটিআই লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে মানচিহ্ন ব্যবহার করে নকল প্যারাসুট নারিকেল তেল, প্যারাসুট বেলিফুল তেল, ডাবর আমলা, কুমারিকা ও কিউট ব্র্যান্ডের হেয়ার অয়েল তৈরি করা হচ্ছিল।

ক্যানসারের ঝুঁকি নকল প্রসাধনী পাউডার বডিওয়াশ বাজার বাড়ছে বিএসটিআই মেয়াদহীন লোশন শ্যাম্পু সয়লাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর