কুয়াকাটায় সড়কে কাঠের তক্তা বিছিয়ে চাঁদাবাজি
২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:০৭
কুয়াকাটা: কুয়াকাটা-কলাপাড়া বিকল্প সড়কের তুলাতলীতে নির্মাণাধীন স্লুইজগেটের ওপর কাঠের তক্তা বিছিয়ে ৩ মাস ধরে যানবাহন থেকে টাকা আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। ৪৮নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ সড়কে চলাচল করা প্রতিটি যানবাহন থেকে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে তারা। প্রতিদিন কুয়াকাটার বিকল্প সড়ক দিয়ে দুই শতাধিকের বেশি যানবাহন চলাচল করে থাকে। যানবাহন থেকে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে গত তিন মাসে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন কিংবা পাউবো কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই জনসাধারণের সেবা করার নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, কুয়াকাটা-কলাপাড়ার বিকল্প সড়কের ওপর পানি নিস্কাশনের জন্য উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) আওতাধীন মৎস্যবন্দর আলীপুর থেকে চাপলী বাজার পর্যন্ত তিনটি স্লুইজ গেট নির্মাণ করছে চায়না সিকো কোম্পানী। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্ষা মৌসুমে নির্মাণাধীন তিনটি স্লুইজগেটের ওপর ইট কিংবা খোয়া না দেওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে কাদা জমে যায়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়কে চলাচল করা ছোট বড় যানবাহন চালকরা। এ অবস্থায় মানুষের দূর্ভোগকে পুঁজি করে তিনটি স্লুইজগেটের মধ্যে তুলাতলী স্লুইজগেটের ওপর তক্তা বিছিয়ে দিয়ে স্থানীয় কবির পঞ্চায়েত, মো. ছগির ও তার ছেলে আল অমিন, হালিমসহ পাঁচজন মিলে যানবাহন থেকে ১০টাকা থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।
মোটরসাইকেল চালক মো. রুবেল খান জানান, কুয়াকাটা থেকে কাউয়ার চর,পায়রা বন্দরে পর্যটকসহ স্থানীয়দের নিয়ে প্রায় সময়ই তার আসা যাওয়া করতে হয়। যতবার তিনি যাতায়াত করেছেন তত বারই ১০টাকা করে দিতে হয়েছে। রুবেল আরও জানান, গত দুই মাসে দুই হাজারের বেশি টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে তাকে। টাকা না দিলে যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করতে দিচ্ছে না। শাহিন, রুবেল মোল্লা, আলমাছ ও রাশেলসহ এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
অভিযুক্ত আল আমিন বলেন, ৪০হাজার টাকা খরচ করে তারা তক্তা বিছিয়েছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে চার-পাঁচজন মিলে এ টাকা তোলা হচ্ছে। লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা, মহিপুর থানা পুলিশ ও পাউবো কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই তারা এ টাকা তুলছে বলে আল আমিন সাংবাদিকদের জানান।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ছিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাসের ভাই সাবেক ইউপি সদস্য ও দাদন ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, থানা পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা তোলার বিষয়ে জানে। তারা কেউ কখনো এবিষয়ে প্রশ্ন করেনি। সেখানে সাংবাদিকদের এটা দেখার বিষয় নয়।
টাকা তোলার ব্যাপারে লেখালেখি করলে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকী দেন শাহ আলম এবং টাকা উঠানো বন্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই বলেও তিনি জানান।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, তার কাছে বলা হয়েছে চেয়ারম্যান টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন। চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে সেখানে তার কিছু বলার নেই।
লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, কর্দমাক্ত সড়কে তক্তা বিছিয়ে চাঁদাবাজির অনুমতি তিনি কাউকে দেননি। আর এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। একই কথা বলেছেন উপকূলীয় বেড়ীবাধঁ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) প্রকৌশলী মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, কে বা কারা তক্তা বিছিয়ে টাকা উত্তোলন করছে এটা তাদের দেখার বিষয় নয়।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তক্তা বিছিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি করছে এটা তার জানা নেই। মহিপুর থানা এলাকায় কোন চাঁদাবাজদের স্থান নেই। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।