‘সরকারি সংস্থাগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতিতে পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম’
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫২
ঢাকা: সরকারি সংস্থাগুলোর অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে পুরান ঢাকায় অবস্থিত রাসায়নিক গুদামগুলো এখনও সরানো হয়নি বলে দাবি করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আর এ কারণে ফের নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো বড় ট্র্যাজেডির পুনারাবৃত্তি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টিআইবি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দাবি ও শঙ্কা প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এর আগে, নিমতলীর পর কেনো চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেনো সরানো হয়নি? এসবের ওপর দীর্ঘমেয়াদী একটি গবেষণা করে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, অগ্নি নিরোধে সরকারি সব নির্দেশকের ক্ষেত্রেই সুশাসনের ঘাটতি ছিল। যার কারণে পুরান ঢাকায় নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের মতো চুড়িহাট্টার দুর্ঘটনার পুনরাবত্তি ঘটেছে ‘
তিনি বলেন, ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করার পাশাপাশি আদালতকেও অবমাননা করেছে। পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির কারণে বাস্তবের মুখ দেখতে ব্যর্থ। এমনকি কতিপয় প্রভাবশালীর অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য পুরান ঢাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া অগ্নি-দুর্ঘটনাকে দুর্যোগ হিসেবে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বাজেট ও পরিকল্পনাও নেই। একই প্রবণতার কারণে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো নীতিমালা এখন পর্যন্ত তৈরিও হয়নি। এবং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে।’
টিআইবি বলছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাবে অগ্নি-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতি ও দীর্ঘসূত্রতা বিদ্যমান, যার ফলে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। সার্বিকভাবে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অংশগ্রহণ ও সমন্বিত কার্যক্রমের উদ্যোগ না থাকলে নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী বলেও শঙ্কা প্রকাশ করে সংস্থাটি।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সুপারিশগুলো তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাসায়নিক বিপর্যয়রোধে জাতীয়ভাবে একটি রাসায়নিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং রাসায়নিক নিরাপত্তা বিষয়ে নির্দেশিকা তৈরি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সরাসরি তদারকির মাধ্যমে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরকার নির্ধারিত জায়গায় স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করতে হবে, অথবা অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদী সময় দিয়ে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানান্তরে রাজি না হলে এসব কারখানার সব ইউলিটি বন্ধ করতে হবে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য এবং আদালত অবমাননাকারী দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সেইসঙ্গে পুরান ঢাকার অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। ভবনগুলোতে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ও জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হবে। রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক ও স্বচ্ছ করতে হবে।’
সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করলে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনায় চুড়িহাট্টার পুনারাবৃত্তি ঘটবে বলে টিআইবি আশঙ্কা প্রকাশ করছে বলে জানান তিনি।
অনিয়ম. দুর্নীতি টিআইবি পুরান ঢাকা বহাল রাসায়নিক গুদাম সরকারি সংস্থা