অপারেশন কিংবা বিদেশ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই ইউএনও ওয়াহিদা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:২১ | আপডেট: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৩১
ঢাকা: দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে হেলিকপ্টারে এনে ঢাকায় নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানকার মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, এ মুহূর্তে অপারেশন করা বা বিদেশে নেওয়ার মতো কোনো অবস্থাতেই নেই ইউএনও ওয়াহিদা। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা ৮ মিনিটে রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ওয়াহিদাকে ভর্তি করানো হয়। এরপর সেখানকার চিকিৎসকদের নিয়ে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তার অবস্থা জেনেছেন। এরপর চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওয়াহিদার মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। সেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার যে বড় ধরনের অপারেশন করা দরকার তা এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। অপারেশন করার মতো অবস্থায় নেই তিনি।
চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যরা আরো জানিয়েছেন, বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবেন সে অবস্থাতেও নেই তার শারীরিক অবস্থা। অবস্থার উন্নতি না হলে কোনোটাই সম্ভব নয়।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে ওয়াহিদাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়েছেন। তারাও ওয়াহিদার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলাকারীদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পার হলেও থানায় মামলা হয়নি। তবে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, হামলাকারীকে শনাক্ত করতে সবাই ধরনের চেষ্টা চলছে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজিসহ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গতকাল বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সরকারি বাসভবনে ইউএনও ও তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখকে কুপিয়ে আহত করেন দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ইউএনওকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রাজকুমার নাথ জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথার বাঁ পাশে যে ধারালো আঘাত রয়েছে তা অত্যন্ত গুরুতর। তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছেন। তার বড় ধরনের অপারেশন করা দরকার। এ জন্য দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনওর সরকারি বাসায় প্রবেশ করে। তারা ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে ঘরে থাকা বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে অন্য কোয়ার্টারের বাসিন্দারা টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
এরপর বাবা-মেয়ে দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের রংপুরে পাঠানো হয়। এদিকে হামলার ঘটনার ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বর ঘিরে রেখেছে প্রশাসন। দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, হত্যার উদ্দেশ্যেই ইউএনওর ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, নওগাঁ থেকে মাঝেমধ্যে মেয়ে ওয়াহিদা খানমের বাসায় বেড়াতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখ। ওয়াহিদা খানমের স্বামী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
আরও পড়ুন
গভীররাতে কুপিয়ে জখম, হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো ইউএনও ওয়াহিদাকে
‘ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনার জট শিগগিরই খুলবে’