Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় বেকার হয়ে চুরি চক্রে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, সঙ্গে চা দোকানিও


৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর একটি বাসায় চুরি করে পালানোর পথে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার দুই যুবক সম্পর্কে ‘বিস্ময়কর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। দু’জনের মধ্যে একজন পেশায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। আরেকজন চা দোকানি। তাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে চা দোকানি পেশাদার চোর। বন্ধুত্বের সুবাদে প্রকৌশলীও তার সঙ্গে চুরিতে জড়ায়। তবে তাদের দাবি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে পড়ায় তারা চুরিতে জড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় দু’জন একটি বাসায় চুরির পর স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেফতার দুজন হলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের কমলার বাপের বাড়ির আহামুদুর রহমানের ছেলে মো. ফারুক (৩২) এবং চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকার মৃত খায়ের মিয়ার ছেলে আনিছুল ইসলাম সুমন (৩১)।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার সারাবাংলাকে জানান, বুধবার বিকেলে ফারুক ও সুমন মিলে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর সড়কে শ্যামলী ভবনের পঞ্চম তলায় জনৈক হাসান সাব্বিরের বাসার তালা ভেঙে চুরি করে। চুরি শেষে যাওয়ার পথে তারা ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষীর জেরার মুখে পড়ে। এ সময় তারা নিজেদের ডিশ লাইনের মেকানিক বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজনসহ মিলে তাদের আটকে গণপিটুনি দেয়। পরে তাদের স্থানীয় আবাসিক সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ওসি আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দু’জনই পেশাদার চোর। তারা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় গত কয়েকমাসে সিরিয়াল চুরি করেছে। ভদ্রবেশে মোটর সাইকেল নিয়ে তারা এলাকায় যায়। বাসার সামনে মোটর সাইকেল রেখে অতিথির বেশে ভবনে ওঠে। সেখানে তালাবদ্ধ বাসা পেলে তালা ভেঙে চুরি করে। একজন নিচে পাহারায় থাকে। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষে তারা দ্রুত চলে যায়। এক বাসা থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির একটি মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে। আরও চুরির খবর আমরা পাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

হস্তান্তরের পর দু’জনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুমন একটি বেসরকারি ইনস্টিটিউট কম্পিউটার হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেছেন। সে নিউমার্কেটে আইটি পার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। চট্টগ্রাম নগরীতে সাতকানিয়ার খাগরিয়াভিত্তিক একটি চোর চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। ফারুক ওই চক্রের সদস্য। তাকে আমরা একবছর আগে কোতোয়ালী থানায় গ্রেফতার করেছিলাম।’

এদিকে গ্রেফতার ফারুক চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে এবং সুমন মহানগর খায়রুল আমীনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে ফারুক জানিয়েছেন, সাতকানিয়ার খাগরিয়ায় ফারুকের চা দোকান আছে। লকডাউন শুরুর পর তার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চালু হলেও আর আগের মতো বিক্রি নেই। আর্থিক অনটনে পড়ে ফারুক তার বন্ধু সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সুমন তাকে গত ২৯ আগস্ট নগরীতে নিয়ে আসে। এরপর ২ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁওয়ে একটি বাসায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে।

জবানবন্দিতে সুমন জানিয়েছেন, লকডাউনের শুরুতেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। তখন আগে থেকে চুরি-ডাকাতিতে জড়িত ফারুক তাকে চুরির সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর গত ২৯ আগস্ট চান্দগাঁওয়ে তাদের দেখা হয়। এরপর ২ সেপ্টেম্বর তারা চান্দগাঁওয়ের একটি বাসায় চুরি করেন।

এস আই সজল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফারুক ও সুমন বন্ধু। দুই বন্ধু মিলেমিলে বেশ কিছুদিন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসায় চুরি করে আসছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তাদের একাধিক বাসার সামনে অবস্থানের তথ্য পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও কয়েকটি বাসায় চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছে।’

চট্টগ্রাম চুরির পেশা নভেল করোনাভাইরাস লকডাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর