টাকা দিলেই মিলছে বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড, বঞ্চিত হতদরিদ্ররা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:১৮
নড়াইল: জেলার কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, টাকা না দিলে বয়স্ক ভাতার কার্ড মেলে না। এমনকি টাকার বিনিময়ে স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কয়েকজন নারীর নামে বিধবা ভাতার কার্ডও করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সমাজসেবা দফতরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুনর রশিদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুজল ঠাকুর অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে নির্ধারিত বয়স না হলেও বয়স্ক ভাতার কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন। এমনকি স্বামী জীবিত থাকার পরও কয়েকজন নারীকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সচ্ছল পরিবারের মাঝে এসব কার্ড বিতরণ করা হয়। ফলে এলাকার প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষ প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলার মহাজন উত্তরপাড়া গ্রামের মো. আলী মাহামুদ বলেন, ‘গত ৪ বছর ধরে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের হাতে-পায়ে ধরেও বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে পারিনি। পরে মহিলা মেম্বার শাহীনা আক্তার ঝর্ণাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ভাতার কার্ড করেছি।’
তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মহিলা মেম্বার ঝর্ণা বলেন, ‘আমি আলী মাহামুদসহ অনেককেই ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। আমার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে তারাই টাকা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
একই ইউনিয়নে নিখিল সাহার ছেলে নৃপেন সাহা মহাজন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৪৫-৪৬ বছর হতে পারে। আমার বাড়ির লোক তার পরিচিত লোক দিয়ে আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছে।’
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী অজিৎ কুমার দাসের ছেলে খোকন দাস। ৬৫ বছর বয়স না হতেই বিশেষ ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে একবছর আগেই তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বয়স্ক ভাতার কার্ড। ইতিমধ্যে দু’বার টাকাও উত্তোলন করেছেন বলেও জানান খোকন।
এছাড়া দক্ষিণ মহাজন গ্রামের প্রভু বিশ্বাসের স্ত্রী গুরুদাসী বিশ্বাস। স্বামী বেঁচে আছেন, কিন্তু কর্তা-ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে টাকাও উত্তোলন করেছেন দু’বার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড করেছি।’
গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘সুজল মেম্বারকে ভাতার কার্ড বাবদ ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার কার্ড হয়নি। অন্য একজন ৮ হাজার টাকা দিয়ে সেই কার্ড সুজল মেম্বারের কাছ থেকে নিয়েছে।’
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সুজল টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভাতা কার্ড দেওয়ার জন্য একটি কমিটি আছে। সেই কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আর এসব কার্ড বিতরণে কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এসব বিষয়ে আমার কোনো ক্ষমতা নেই।’
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। আমার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা সব জানেন।’
মাউলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে শতভাগ নিয়ম মেনে কাজ করা কঠিন। তারপরও আগামীতে এ ধরনের কোনো অনিয়ম যাতে না হয় সে বিষয়ে তদারকি করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, ‘ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। আমার দফতরে বয়স্ক, বিধবা এমনকি প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীদের তালিকাও থাকে না। এসব তালিকা ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের কাছে থাকে।’