ইউএনও’র ওপর হামলা: আসামিদের দাবি— চুরি করতে গিয়েছিল তারা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:১১
ঢাকা: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিরা দাবি করেছেন, তারা চুরি করতে গিয়েছিল। এবং এ সময় বাধার শিকার হয়ে তারা এ হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা র্যাব-১৩’র সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস। এর আগে ইউএনও’কে হত্যাচেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম, সান্টু ও নবীরুলকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে।
রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনার খবর পাওয়ার পর র্যাব এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে আসাদুল নামে একজনকে শুক্রবার ভোরে হিলির কালীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দিনভর অভিযান চালিয়ে নবীরুল ও সান্টুকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, তারা চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় গিয়েছিল। এদের মধ্যে নবিরুল ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাত করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।’
তবে শুধুই কি চুরি নাকি অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে এ বিষয়ে র্যাব তথ্য অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার নেপথ্যে আরও কোনো কারণ আছে কি-না তা জানতে সময় লাগবে। অভিযুক্তদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীরসহ আরও তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।
পরে সকালে আহত বাবা-মেয়েকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইউএনও ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে রাজধানীতে আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি এবং দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ।
এদিকে হামলার ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদার ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। মামলার পর শুক্রবার দিনভর অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরা হলেন- ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলম (৪২), উপজেলা যুবলীগের সদস্য (বহিষ্কৃত) আসাদুল ইসলাম (৩৫), শিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০), নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮), চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম (৩৫) ও একই এলাকার খোকার ছেলে সান্টু চন্দ্র দাস (২৮)।