বগুড়ায় ছোনকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পজিশন বাণিজ্যের অভিযোগ
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:১৫
বগুড়া: বগুড়ার শেরপুরে ছোনকা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা ‘পজিশন বাণিজ্যের’ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে এ কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ছোনকা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বরাদ্দ নেওয়া দোকানঘর ভেঙে ফেলে সেখানে স্থায়ীভাবে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করছে। এক্ষেত্রে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুল ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল রশিদ ২৭-৩০ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন।
এ ছাড়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়টির লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন-মর্মে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তাঁর দফতরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক শাখার পক্ষ থেকেও কমিটি করা হয়েছে। মহামারী করোনার কারণে কমিটির কাজ শুরু করতে একটু বিলম্ব হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। একইসঙ্গে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মাধ্যমিক এই কর্মকর্তা।
অভিযোগে বলা হয়, ছোনকা ও ভবানীপুর এলাকার শিক্ষানুরাগী এবং দানশীল ব্যক্তিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক সংলগ্ন ছোনকা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে একাধিক জোতদার ব্যক্তি শতাধিক বিঘা জমি এই প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিষ্ট্র দলিলের মাধ্যমে দান করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মোসলেম উদ্দিন, তছির উদ্দিন তালুকদার, আব্দুল গণি তালুকদার, আজিমুদ্দিন আকন্দ প্রমুখ। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের জায়গা-জমি দখলের মহাৎসব চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের জায়গায় দোকান বরাদ্দ নেওয়ার শর্ত ভেঙে সেখানে স্থায়ীভাবে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। স্কুলের খেলার মাঠ ইজারা দিয়ে সাপ্তাহিক হাট বসানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে বসানো হয়েছে করাতকল, মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার ও হাট-বাজারের সেড। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট লাখ লাখ টাকা নেওয়া হলেও স্কুলের একাউন্টে জমা পড়েছে নামমাত্র টাকা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ইটালী গ্রামের শহীদুল ইসলাম মহাসড়ক সংলগ্ন পশ্চিম পাশে একাধিক দোকান ঘরের জায়গা বার্ষিক ইজারা নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বহুতল মার্কেট। একইভাবে স্কুলের জায়গায় ইজারার শর্ত ভেঙে একটি কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছেন। পাশের রাজবাড়ী মিষ্টান্ন ভান্ডারের উত্তম কুমার, সুলতান হোসেন, বুলবুল ইসলাম, আবু সাঈদ, শাওনসহ একাধিক ব্যক্তিও বহুতল ভবন গড়েছেন। এসব ব্যক্তিরা এসব ভবনের দোকান পজিশন লাখ লাখ টাকায় বরাদ্দ এবং উচ্চহারে ভাড়া আদায় করলেও নামমাত্র টাকা জমা পড়ছে স্কুল ফান্ডে। তাও অনিয়মিত।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুল সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, কোন বিষয়ে জানার থাকলে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করার কথা বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এসএম রশিদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত সময়ে যারা এই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন তারা বর্তমান কমিটিতে স্থান না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে বিভিন্ন দফতরে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।