Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম যেন খারাপ খবরের শহর না হয়, প্রত্যাশা বিদায়ী কমিশনারের


৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৫৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম যেন খারাপ খবরের শহর না হয়- বিদায়বেলায় বিদায়ী কর্মস্থলকে নিয়ে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মো. মাহাবুবর রহমান।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনারের কণ্ঠে ছিল বিদায়ের সুর। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানকে বদলি করে সম্প্রতি শিল্প পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক করা হয়েছে। রোববার সিএমপিতে তার শেষ কর্মদিবস।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালী থানার উদ্যোগে বিনামূল্যে ‘হ্যালো অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা চালু এবং দৃষ্টিনন্দন গেইট উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সিএমপি কমিশনারের বিদায়ের আয়োজনে পরিণত হয়। কমিশনারের বক্তব্যে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপস্থিত সব পুলিশ সদস্যরা আবেগাক্রান্ত হন।

চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকে কর্মজীবনে অনেক বড় প্রাপ্তি উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘চট্টগ্রাম অনেক বিশাল শহর। ঐতিহ্যগতভাবেই চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারণে চট্টগ্রাম বিশাল। সবচেয়ে বড় কথা, এখানকার মানুষের মন অনেক বড়। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকে আমি কর্মজীবনের সেরা অর্জন বলে মনে করি।’

‘সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রাম অনেক ভালো জায়গা। এখানকার সাধারণ মানুষ অনেক ভালো। চট্টগ্রামের মানুষের মন অনেক বিশাল। কথা নেই, বার্তা নেই, চিনি না, জানি না, যে কোনো অনুষ্ঠানে বাসায় খাবার পাঠিয়ে দেয়। একবারও ফোনে কথা হয়নি, খাবার যে পাঠাচ্ছেন সেটাও জানাননি। কিন্তু বাসায় খাবার পৌঁছার পর জানতে পারি, অমুক পাঠিয়েছেন, তমুক পাঠিয়েছেন। এই যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা, আথিথেয়তা- এটা চট্টগ্রামের বাইরে আর কোথাও পাইনি। এমনকি আমার নিজের জেলার মানুষের মধ্যেও দেখিনি। এই ভালোবাসা আর ভালো অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি চট্টগ্রাম ছেড়ে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এখানে যারা রাজনৈতিক নেতা আছেন, তাদের মন অনেক বড়। উনাদের মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা আমি দেখিনি। নেতাদের অনেক তদবির আমি রিফিউজ করেছি, ভদ্রভাবে রিফিউজ করেছি। কিন্তু এটা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো বিরাগ আমি দেখিনি। উনাদের মন এত বিশাল, উনারা বুঝে নিয়েছেন যে, ইচ্ছে করলেও পুলিশ আইনের বাইরে গিয়ে কাউকে কোনো সহযোগিতা করতে পারে না।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর সিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ নিয়ে দেশজুড়ে প্রশংসা পান মাহাবুবর রহমান। সেই কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা স্বীকার করি বা না করি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কিন্তু পুলিশের একটি দূরত্ব আছে। আমরা বিভিন্নভাবে সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করি কিন্তু বড় কোনো সুযোগ আসে না। করোনাকালে যে মহামারি পরিস্থিতি, আমি সেটাকে একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, মানুষের কাছাকাছি গিয়ে, মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান নিয়ে তাদের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে যে প্রচলিত ধারণা সেটা পাল্টে দিতে। নেতিবাচক ধারণা পাল্টে তারা যেন পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। এটা করতে গিয়ে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন, আমি নিজেও আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ধারণা আমরা মানুষের মধ্যে তৈরি করতে পেরেছি বলে আমি মনে করি।’

‘সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে যে ইতিবাচক ধারণা, সামান্য হলেও আমরা তৈরি করতে পেরেছি, আমি চলে যাবার পরও আমার সহকর্মীরা এটা অটুট রাখবেন, আমার বিশ্বাস আছে। সিএমপির সকল পর্যায়ের পুলিশ অফিসাররা সবসময় মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করেন, এটা আমি দেখেছি। বিশেষ করে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের যে উদ্ভাবনীমূলক, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড-এটাকে আমি সবসময় সাপোর্ট দিয়েছি, উৎসাহ দিয়েছি। আমি চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও সিএমপির যে কোনো ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম রাখবো। আমি অনলাইন থাকি সবসময়, ফেসবুকে আছি, সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।’

দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরতার কথা তুলে ধরে মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘সংবাদপত্র, টেলিভিশন বিশেষ করে অনলাইনের নিউজ আমাকে সবসময় বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছে। সাংবাদিক ভাইদের বিভিন্ন তথ্যের ওপর আমি সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছি এবং তাতে উপকৃত হয়েছি। প্রতিদিন আমার কাছে যত সাংবাদিকের ফোন আসত, আমি অন্তঃত ৯৫ শতাংশ সাংবাদিকের কল রিসিভ করেছি, কথা বলেছি। অনেকসময় একই কথা বারবার বলতে হত, বিরক্ত লাগত। তারপরও আমি পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে যাতে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে, সেজন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে নিতাম।’

বিদায়বেলায় চট্টগ্রামবাসীর কাছে শুভকামনা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যাচ্ছি, আসলে যাচ্ছি না। আমার মন পড়ে থাকবে চট্টগ্রামে। আমাকে সবাই মনে রাখবেন। আমার ভুলটুকু আশা করি কেউ মনে রাখবেন না। ভালো স্মৃতিটুকু মনে রাখবেন। আমিও সকল তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে চাই। সুখকর অভিজ্ঞতাটুকু নিয়ে থাকতে চাই। কামনা করি, চট্টগ্রাম যেন কোনো নেগেটিভ নিউজের শহর না হয়, খারাপ খবরের শহর যেন না হয়। চট্টগ্রামের মানুষ যেমন ভালো, এই শহরও যেন সেই ইমেজ নিয়েই টিকে থাকে।’

অনুষ্ঠানে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মানুষের পাশে থাকা, পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে দেওয়া- এই মনোভাবটুকু আমাদের মাঝে জাগ্রত করেছেন সিএমপির কমিশনার স্যার। তিনিই আমাদের মাঝে মানবিক পুলিশিংয়ের বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের অভিভাবক হয়ে সবসময় আমাদের মাথার ওপর তিনি ছায়া দিয়েছেন। এই যে সিএমপিতে, বিভিন্ন থানায় যেসব ভিন্নধারার কর্মকাণ্ড, বলা হয়- এটা অমুক করেছেন, তমুক করেছেন, আসলে এটা করেছেন আমাদের অভিভাবক কমিশনার স্যারই। উনার মাথায় সারাক্ষণই মানুষের জন্য কিছু করার একটা তাগাদা থাকতো। চট্টগ্রামবাসী স্যারকে খুব মিস করবে। চট্টগ্রামবাসী সবসময় স্যারকে মনে রাখবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে মানবিক কার্যক্রমের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক রুনা আনসারী ও সাংবাদিক আজাদ তালুকদার বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, মোস্তাক আহমেদ ও শ্যামল কুমার নাথ এবং উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক, ভারপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ, কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনার চট্টগ্রাম পুলিশ বিদায়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দশম গ্রেড দাবি করায় ৬৪ অডিটরকে বদলি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৫

সম্পর্কিত খবর