Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘করোনাকালেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি’


৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:২৭

ঢাকা: পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘অর্থনীতিরি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা যায় আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ অমাদের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেশ ভালো হচ্ছে, কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। পাশাপাশি দেশের রফতানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সবই ঊর্ধ্বখী ধারায় ফিরেছে।’

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ‘কোনদিকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলার বিশেষ আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসে অংশ নিয়ে ড. শামসুল আলম এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিরি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা যায় আমাদের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’

সারাবাংলা.নেট-এর বিশেষ প্রতিনিধি এম এ কে জিলানীর সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ।

ড. শামসুল আলম বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের ৩৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক ধান উৎপাদন হযেছে, গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এই বছর ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষি অবস্থা বেশ ভালো এটা স্বীকার করতেই হবে। কারণ কোথাও কোনো কৃষিপণ্যের ঘাটতি নেই। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রফতানি কিছুটা কম হয়েছে। আমাদের প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রফতানি হয়। কিন্তু এবার আমাদের রফতানি আয় হয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে কিছুটা কম। এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে, গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে তেমন কাজ কর্ম না হওয়ায় রফতানি আয় বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তবে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আমাদের রফতানি আয় বেড়েছে। গত জুলাই মাসে ৩০০ কোটি ডলার এবং গত আগস্ট মাসে আয় হয়েছে ৩৩৬ দশমিক ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। এটি ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি। এছাড়া প্রবাসী আয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী জুলাই ও আগস্টে ৪৫৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। গত জুলাই মাসে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং আগস্ট মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থনীতির এসব সূচক বিশ্লেষক করে বলা যায় অমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত সময়ে আমাদের মূল্যস্ফীতি (ইনফ্লুয়েশন) ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তার আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৬ দশকি শূন্য ২ শতাংশ ছিল। ফলে গত জুলাই মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। তবে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে বলা হয় দেশের অর্থনীতি পরিস্থিতি বেশ মজমুত অবস্থানে রযেছে। পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ২৫৪ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার। আর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঘাটতি চার হাজার ৮৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে। অর্থনীতি ভালো না থাকলে এই গ্যাপটা কমার কথা না। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।‘

তিনি বলেন, ‘গত বছরের জুলাই মাসে ৩৮৮ দশমিক ৭৮ কোটি ডলারের তৈরি পোষাক খাতে রফতানি হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯১ দশমিক ৯ কোটি ডলার। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আমদানি হয় ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। আর এবছরের জুলাই মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। এ থেকে বলা যায়, আমাদের আর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে।’

বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘কোভিড-১৯ কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। সবশেষ কোয়ার্টারে জাপান, ভারত, ইউকে এবং জামার্নের অর্থনীতি বড় ধরনের ধস নেমেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেটার অবস্থানে রযেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, তৈরি পোষাক এবং কৃষি এই তিনটি খাতের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্সে কোনো ভাটা পড়েনি, বরং বেড়েছে। আমাদের কৃষিখাত বেশ ভালো অবস্থানে ছিল। বন্যার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কৃষি খাত এখনো যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। তৃতীয়ত, গত মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে আমাদের রফতানির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার কম হয়েছে। তবে আশার কথা হলো মে ও জুন থেকে এটা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। সবশেষ জুলাই ও আগস্ট মাসে রফতানি খাতে বেশ ভালো গ্রোথ হয়েছে। এইভাবে চিত্রটা দেখলে বলা যায় আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। করোনায় আমরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।’

পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে আমাদের তৈরি পোষাক খাত ধীরে ধীরে ভালো করছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স বাড়ছে। ফলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই কোয়ার্টারে আমাদের অর্থনীতি একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে থাকবে বলে আশা করছি।

বিজিএমইএ-এর সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘করোনা সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা দিযেছে। আর এই কারণে এখনো দেশের অর্থনীতি স্বস্তির জায়গায় অবস্থান করছে। তবে এটা বলা যায় লোকাল মার্কেট এখন স্বস্তির জায়গায় আসেনি। আমাদের ইনফরমাল সেক্টরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি লোকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। যেখানে ফরমাল সেক্টরে এর পরিমোণ সোয়া কোটি। আবার ফরমাল সেক্টরের সোয়া কোটির মধ্যে ৫০ শতাংশ লোকের কর্মসংস্থান হযেছে তৈরি পোষাক খাতে। ফলে ইনফরমাল সেক্টরকে সচল রাখতে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয় ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাঙ্গা করতে পারলে আমাদের অর্থনীতি স্বস্থির মধ্যেই রাখা সম্ভব হবে। সেজন্য লোকাল মার্কেটের দিকে নজর দিতে হবে।

অর্থনীতি কৃষি সারাবাংলা ফোকাস

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর