ঢাকা: এবার কয়েক দফা বন্যায় ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সেবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা কমে গেলেও এখনও অনেক জেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গিয়ে, গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তাঁর ছিড়ে গিয়ে এ সব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সেসব মেরামতের কাজ চললেও ঝুঁকি বিবেচনা করে এখনো বন্যাকবলিত এলাকার সকল গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, পানি নেমে গেলেই ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড- আরইবি’র তথ্য অনুযায়ী এবার কয়েক দফা বন্যায় দেশের ২৭ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত এরিয়া ১০৩ উপজেলা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরিশাল, খুলনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এলাকা।
বিতরণ সংস্থা আরইবি’র তথ্য বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ২৬ জেলার ৪৬১ টি বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে কিছু খুঁটি একেবারে ভেঙে গেছে, যা মেরামতের অবস্থায় নেই। কিছু উপরে পড়েছে। আবার কিছু বাঁকা হয়ে পড়েছে। যা মেরামতের কাজ চলছে। এসব কারনে ওইসব এলাকার ৩৮ কিলোমিটার লাইন এখনো বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ৭২ ট্রান্সফরমার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ ট্রান্সফরমার।
সূত্র জানায়, এবার বন্যায় ১০৩ উপজেলায় ১০ হাজার ৩১১ জন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ওঠেন। এ জন্য আইরইবি ২৮১ টি আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়তি বিদ্যুত সরবরাহ করে। জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতক্ষীরায় হয়েছে। সেখানে এখনো প্রায় দুই হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। কুড়িগ্রাম ও লাল মনিরহাটে ১৭৩ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন। আর ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ ১৮, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, খুলনায় এখনো ২৫১ জন গ্রাহক বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। বন্ধ রয়েছে শেরপুরের দুটি বিদ্যুৎ লাইন। সবমিলিয়ে ২ হাজার ৪১৩ জন গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে বন্যায় বিদ্যুতের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার বন্যায় বিদ্যুতে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে দুর্ভোগ হয়েছে বেশি। তারা বলেন, বন্যার কারণে অনেক এলাকার লাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। কারণ পানির উচ্চতা বৈদ্যুতিক তার ছুঁইছুঁই করছিল। বিদ্যুতের লাইন বন্ধ না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে সর্তক থাকতেও বলা হয়েছিল। যে কারণে জানমালের ক্ষতি হয়নি। তারা বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সেসব এলাকার বিদ্যুতের লাইন ফের চালু করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘বন্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। যেসব এলাকায় পানি উঠেছে সেসব এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ সংযোগ দিয়েছে। তবে যেসব খুঁটি বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখনও পানিবন্দি রয়েছে যেসব এলাকা, সেসব স্থানের পানি নেমে গেলেই বিদ্যুৎ পাবেন গ্রাহকরা।’ এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।