Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চোখের সামনে দিয়ে আগুনের ফুলকি চলে গেল’


৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৫৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: আমার চোখের সামনে দিয়ে আগুনের ফুলকি চলে গেল। তখনও বুঝতে পারিনি ভিতরে কিছু হয়েছে। দুই মিনিট পরে মসজিদের দরজা খুলে দেখি প্রায় সব মুসল্লি মসজিদের ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেখানে আবার বাবাও ছিল। তার বাবার নাম আব্দুল হান্নান সাউদ (৫০)। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার স্থানীয় তারা।

শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভেতরে কথাগুলো বলছিলেন দগ্ধ হান্নানের ছেলে শাহজালাল।

শাহজালাল বলেন, ‘আমার বাবা হান্নান মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। মসজিদে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। আমি নিজেও নামাজ পড়তাম। গতকাল আমার বাবা পাশের বাসার ফয়সাল ও তার বাবা বাহাউদ্দিন এক সঙ্গে নামাজ পড়তে যাই। এশার ফরজ নামাজ জামাতে শেষ করি। পরে দুই রাকাত সুন্নত ও বেতের নামাজ আদায় করি। এর মধ্যে কেউ নফল নামাজ পড়ছে। কেউ মোনাজাত করছে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি এবং ফয়সাল মসজিদের দরজা খুলে বের হই। দুই মিনিট পর দেখি আমাদের সামনে দিয়ে আগুনের ফুলকি বেরুচ্ছে। বুঝতে পারলাম মসজিদের ভেতরে কিছু একটা হয়েছে। দরজা খুলেই দেখতে পারি আমার বাবাসহ মুসল্লিদের কান্নাকাটি। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী করব। মসজিদের ভেতরে সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু তখন আমার বাবাকেউ চিনতে পারছিলাম না।’

শাহজালাল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। আর কথা বলতে পারছিলেন না। পাশ থেকে ফয়সাল বলে ভাই এই ঘটনার বর্ননা দিতে পারব না। আমার বাবাও দগ্ধ হয়েছে। তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চামড়া উঠে সাদা হয়ে গেছে। আমি প্রথমে আমার বাবাকে চিনতে পারিনি। মসজিদে ঢুকতেই আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে বলে, বাবা আমাকে বাঁচাও। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। কাকে রেখে কাকে ধরব? মসজিদের ভেতরেই যেন কেয়ামত সৃষ্টি হয়ে যায়। নিজের স্বজনদের কেউ চিনতে পারছিল না। কিন্তু শেষরক্ষা হলোনা বাবার। শনিবার সন্ধ্যায় বাবা বাহাউদ্দিন (৬০) চিকিৎসাধীন মারা যান।

ফয়সাল বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার বাবা সহ কয়েকজনকে নিয়ে বের হয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যাই। মসজিদ কমিটির অনেককেই দোষারোপ করেন। অনেকদিন ধরেই গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলাম। মসজিদের বারান্দায় নামাজ পড়ার সময় গ্যাসের গন্ধে সিজদা দিতে পারতাম না। বারান্দার প্লাস্টারের নিচ দিয়েই গ্যাসের পাইপ চলে গেছে। হয়ত কোনো জায়গায় লিক হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কোনো কর্ণপাত করত না।’

শুধু ফয়সালই তার বাবাকে হারাননি। নুরউদ্দিন ও পারুল বেগম দম্পত্তি হারিয়েছে কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে সাব্বির হোসেন (২১) ও জুবায়ের (১৮) কে। প্রাণ হারিয়েছেন মসজিদের মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭)। রাহিমা বেগম হারিয়েছে তার একমাত্র ছেলে জুবায়েদকে (৬)।

গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এশার নামাজের পরপরই বিস্ফোরণ হয়। এতে দগ্ধ হন ৩৭ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারি জানান, এখন পর্যন্ত ১৬টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সবগুলো মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট পেলেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগুনের ফুলকি টপ নিউজ মসজিদ কমিটি মসজিদে বিস্ফোরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর