মসজিদে বিস্ফোরণ: বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্তের দাবি বিএনপির
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:২৭
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা কি শুধুমাত্র বিদ্যুতের জন্যে, গ্যাসের জন্যে, এসির জন্যে— নাকি ইচ্ছাকৃত কোনো স্যাবটাজ এখানে করা হয়েছে?— এ ব্যাপারে জাতি জানতে পারছে না। আমরা মনে করি যে, এই ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে অবিলম্বে তদন্ত কমিটি করা দরকার। এটার সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা দরকার এবং তাদের শাস্তির বিধান করার দরকার।’
সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিষয়টা (ঘটনা) খুবই রহস্যজনক। গভমেন্টের যে ভার্সন, সেই ভার্সন বিভিন্ন রকম হচ্ছে। তাদের যে মূল সংস্থা ফায়ার বিগ্রেড প্রথমদিন একরকম কথা বলেছে, পরে বিদ্যুত বিভাগের লোকেরা গিয়েছে তারা একম রকম কথা বলেছে, গ্যাসের লোকেরা গিয়ে তারা আরেক রকম কথা বলেছে।’
‘এরইমধ্যে ২৬ জনের প্রাণ চলে গেছে। বাকিদের শ্বাসনালীসহ পুরো শরীর দগ্ধ হয়েছে। আরও যে কত জন মারা যাবে তা বলা মুশকিল। দুর্ভাগ্যজনক যে, এই ঘটনাকে সেই রকম গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়নি’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘মসজিদের বিস্ফোরণ নিয়ে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য শোনা গেছে, যে বক্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর। যে বেআইনিভাবে সরকারি জায়গার উপরে গ্যাস লাইনের উপরে মসজিদ করা হয়েছে। এটা তো এই মুহূর্তে বিবেচ্য বিষয় নয়। এই মুহূর্তের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে যে, বিস্ফোরণ ঘটলো কীভাবে?এই বিস্ফোরণের প্রকৃতিটা কী, তার চরিত্রটা কী?’
স্থানীয় সরকারসহ উপ-নির্বাচনে যাবে বিএনপি— এমন তথ্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা গত দুইটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তীকালে আমরা প্রচারণায় যাইনি, আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। আমরা উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করব, সেই সিদ্ধান্তই আছে। সে অনুযায়ী আমরা ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে অংশ নেব। আগামী ১০ তারিখে নমিনেশন ফরম বিক্রি করা হবে। ১২ তারিখে পার্লামেন্টারি বোর্ড সাক্ষাৎকারের জন্য বসবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্যে।’
মেজর সিনহা হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহার হত্যার বিষয়টা অত্যন্ত বিগ রুটেড। এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটা হচ্ছে, স্পস্টে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং। পুলিশকে এই অথোরিটি কে দিয়েছে? এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই যে, পুলিশ মূহূর্তের মধ্যে কাউকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। দুই নাম্বার হচ্ছে যে, হত্যার ইম্যুনিটি (দায়মুক্তি) দেওয়া হয়েছে কিনা। আমরা জানি না এই ধরনের দায়মুক্তি পুলিশের আছে কিনা?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যমে আপনারাই তুলে ধরেছেন যে, গত কয়েকবছরে পুলিশ কাস্টোডিওতে, বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। একই সঙ্গে গুম হয়েছে কতজন? এই বিষয়গুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এজন্য যে, জাতিসংঘের সনদে এগুলো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং এই অপরাধের সাথে যারা জড়িত যেমন সার্বিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে তাদের অনেকেরই কিন্তু বিচার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহার এই ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে, বিষয়টাকে একেবারে সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বহু আগে থেকে ২০০৮ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে কিন্তু এসব ঘটনা ঘটছে। অত্যন্ত বেশি ঘটেছে ২০১৩.২০১৪.২০১৫ তে। সেগুলো সবই ছিলো রাজনৈতিক। এসব নিয়ে কিন্তু সেভাবে সারফেসে আসেনি। আমরা অনেক কথা বলেছি, মানববন্ধন করেছি, ভিকটিম ফ্যামিলিগুলোকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে, জাতির সামনে আসার চেষ্টা করেছি। আমাদের ভিকটিমরা জাতিসংঘের সদর দফতর জেনেভায় পর্যন্ত গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে প্রত্যেকবছরই এই বিষয়গুলো এসছে, ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিশন, অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ডেমোক্রেসি ওয়াচ এবং বৃটিশ পার্লামেন্টেও এই বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছে।’
সিনহা হত্যাকাণ্ড ধামচাপা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেখুন এই সিনহার বিষয়টাকে কিভাবে ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং এখনো হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনোভাবে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা যে রিপোর্ট পড়লাম গণমাধ্যমের মাধ্যমে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২০০ লোক কিলিং হয়েছে কক্সবাজারে, সেগুলো বিচারবহির্ভুত হত্যা।’
‘এরপর অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের যে সম্পদের বিবরণ আমরা পেলাম কোটি কোটি টাকার সম্পদ, বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ। এথেকে প্রমাণিত হয়, পুলিশের এই এজেন্সিরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থারা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই সমস্যা বিএনপির সমস্যা নয়, গোটা জাতির সমস্যা। যখন একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার হদিস পাওয়া যায় না সেটা শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলে নয়, যেকোনো মানুষের জন্য নিরাপত্তার ব্যাপার, তার পরিবারের ভবিষ্যতের ব্যাপার’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দিনাজপুরের ইউএনও‘র ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দিনাজপুরের ঘোড়ারঘাটে ইউএনওকে রাতে হত্যার জন্য এভাবে আহত করা হলো, তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। আর দেখা গেলো অল অন এ সাডেন! র্যাব একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিলো যে, এটা চুরির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে। যেটা আমরা মনে করি যে, একেবারেই দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিচ্ছবি। দুইটি দিক থেকে। একটা হচ্ছে ‘ল লেস নেস। বাড়িতে ঢুকে যে কাউকে মেরে দেওয়া যায়, কাউকে আঘাত করা যায়। আরেকটা হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই চট করে একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেয় যে, চুরির জন্য ঘটনা ঘটছে। গোটা বিষয়টা ডাইভার্ট হয়ে গেল।’
সরকার কোভিড টেস্ট কমিয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার নির্দেশ দিয়ে কোভিড টেস্টিং কমিয়ে দিয়েছে। সরকার বলছে যে, আপাতত বন্ধ রাখো। দিস এমাজিন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোন জায়গায় চলে গেছে। আজকে লক্ষ্য করে দেখেন প্রতিদিনের ব্রিফিং বাদ দিয়েছে। কারণ আর কত মিথ্যা কথা বলবে। এখন একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয় অনলাইনে। সংক্রমণ তথ্য লুকিয়ে লাভ কী? সরকারের ব্যর্থতার কারণে, তাদের উদাসীনতার কারণে কোভিড ছড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা হলে সরকারের প্রয়োজনটা কী?’
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জনগনকে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ উচিত। মানুষের এ্খন এই সরকারের কাছে জবাব চাওয়া উচিত। সরকারকে বলা উচিত-এনাফ ইজ এনাফ। দয়া করে বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষমা দাও, তোমরা চলে যাও এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবার ব্যবস্থা করা।’