বীরাঙ্গনা খেতাব পেতে ভুয়া সনদের আশ্রয় আ.লীগ নেতার
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:১৩
জয়পুরহাট: আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দাবি, ১৯৭১ সালে আসমা বিবির বয়স ছিল ৩ বছর। আর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর ৩ মাস। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেকে ২০ বছর দাবি করে ‘বীরাঙ্গনা’ মুক্তিযোদ্ধার আবেদন করেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা মহিলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মহিলা সংস্থা জয়পুরহাট জেলা শাখার চেয়ারম্যান।
এজন্য জাল করা হয়েছে একাধিক সনদ। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা এবং মহিলা আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর প্রেক্ষিতে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম আলী জেলা প্রশাসকের কাছে সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে আবেদন করেন।
সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতে নিজেকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করতে আছমা বিবি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আছমা বিবি স্থানীয় দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাবার পরিবর্তে স্বামীর নাম দিয়ে জন্মতারিখ ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর উল্লেখ করে জন্মনিবন্ধনও করে নিয়েছেন। তবে জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স সংশোধনের আবেদন করলেও তথ্যে গরমিল থাকায় নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে। তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জামুকা’র সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক চলতি বছরের ২ জানুয়ারী বিশেষ কমিটি কর্তৃক যাচাই বাছাইয়ের জন্য জয়পুরহাট সদরের উপজেলা নির্বাহী বরাবরে চিঠি ইস্যু করেন। চিঠির প্রেক্ষিতে সদর উপজেলায় কর্মরত ৫ সদস্যের সরকারি নারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহনাজ সিগমা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে গত ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে তিনি আছমা বিবিকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় সরকারি জায়গা দখল, গাছ কাটাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু এমপি জানান, তিনি সরকার এবং দলের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাইছেন। তার বিচার হওয়ার দরকার এবং এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের চিহিৃত করা দরকার।
জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন,‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আছমা বিবি নিজেকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, ‘ওইসময় জাতীয় পরিচয়পত্রে আমার জন্মতারিখ ভুল লেখা হয়েছে। তাই আমি সংশোধন করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমি একজন প্রকৃত বীরাঙ্গনা হিসেবে যাবতীয় কাগজপত্র সহ গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন করেছি।’