বিচার বহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি বিএনপি’র
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩২
ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির দুই সংসদ সদস্য। এসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাকাণ্ডসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার যেন সুবিচার পায়, সে জন্যও তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশিদ। তিনি তার নির্বাচনি এলাকা বিভিন্ন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পরে আলোচনায় অংশ নেন একই দলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘেনের অভিযোগ করেন।
আলোচনায় হারুনুর রশীদ বলেন, গত বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র দুই দিন পর ৩০ এপ্রিল আমার নির্বাচনি এলাকায় প্রকাশ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। একটি পেশাদারি প্রতিষ্ঠান বিকেল ৪টায় একজন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশি এজাহারে ওই ঘটনা থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ঘটেছে বলে দেখানো হয়। এজাহারে বলা হয়, পুলিশের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালানো হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র দেখানো হয়েছে হাতে তৈরি অস্ত্র। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওই ঘটনায় দু’জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের একজন আমাদের এলাকায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। আর তার বড় ভাই। অথচ ঘটনার দিন তারা সংসদে এসে সংসদ গ্যালারি থেকে আমাদের অধিবেশন দেখেছেন। সংসদে ঢুকতে হলে সবার অনুমতি নিতে হয়। এই সংসদের কাছে এ ধরনের ডক্যুমেন্টস আছে। তাদের নামে আমি পাস ইস্যু করেছিলাম।
হারুনুর রশীদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তা নিয়ে নাটক বানাচ্ছে। আমাদের এলাকার এক ছাত্রকে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এলাকায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। ঢাকা থেকে তুলে নেওয়ার চার দিন পর তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের আজ বিচার হচ্ছে। আদালত তাদের পরিবারের মামলা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আরও তিন হাজারের বেশি ব্যক্তি এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তারা কি বিচার পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? তাদেরকে কি রাষ্ট্র এই অধিকার দেবে না?
এরপর ব্যারিস্টার রুমন ফারহানাও সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই সরকার ২০১৩ সালে একটি আইন করেছিল— হেফাজতে নির্যাতন মৃত্যু নিবারণ আইন। ওই আইনে চমৎকার সব ধরা থাকা সত্ত্বেও সেই আইনে খুব বেশি মামলা হয়নি। অথচ এই সাত বছরে অসংখ্য মানুষ পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে। কিন্তু তার মামলাগুলো কী হলো, কেন পরিবারগুলো মামলা করার সাহস পায় না, হলে কয়টি মামলা হয়, সেসব মামলার কী অবস্থা— তার কিছুই আমরা জানি না। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবারই দৃষ্টি কেড়েছে। অথচ প্রতিদিনই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন, ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন এবং ২০২০ সালে করোনাকালে প্রথম ছয় মাসে ১৫৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন একজনের বেশি মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও এগুলোর একটিও কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত এক যুগে অর্থাৎ ১২ বছরে তিন হাজারের বেশি মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ গুম বলে কোনো শব্দ নেই। একই লাইন ধরে পুলিশের আইজি কিছুদিন আগে বলেছেন, ক্রসফায়ার নামেও কিছু নেই। এটি এনজিওগুলোর শব্দ। যে রাষ্ট্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়, সেখানে বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন থাকে না।
পয়েন্ট অব অর্ডার বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদ অধিবেশন হারুনুর রশীদ