গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে সংসদে বিল পাস
৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫১
ঢাকা: গাজীপুরের উন্নয়নে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০২০’ সংসদে পাস হয়েছে। গাজীপুর শহর ও এর আশেপাশের এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়নের উদ্দেশ্যে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বিল পাস হলো। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হবে। তখন সরকারি গেজেট দ্বারা পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামক বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। যদিও বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধীদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্য। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে স্পিকার বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব দিলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী। এরপর বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটি গত ৬ আগস্ট বিলটি চূড়ান্ত করে পাসের জন্য সংসদে পাঠায়।
গাজীপুর শহর ও এর আশেপাশের এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়নের উদ্দেশ্যে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার জন্য এই বিল পাস করা হয়। বিলের ৪০ ধারায় মহাপরিকল্পনার পরিপন্থি ভূমি ব্যবহারের দণ্ড সম্পর্কে বলা আছে- যদি কোনো ব্যক্তি মহাপরিকল্পনায় চিহ্নিত বা উল্লেখিত উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভূমি ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তি অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ইমারত নির্মাণ, জলধারা খনন, চালা অথবা উঁচু ভূমি ইত্যাদি বিষয়ে বিধি নিষেধ সম্পর্কে ৪১ ধারার (১) উপধারায় বলা আছে- অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার মধ্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ইমারত নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, পুকুর বা কৃত্রিম জলধারা খনন বা পুনঃখনন কিংবা চালা বা উঁচু ভূমি কাটা যাবে না।
বিলে বলা হয়, ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। কর্তৃপক্ষ পরিচালনার জন্য একজন চেয়ারম্যান, চারজন সার্বক্ষণিক সদস্যসহ ১৫ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। কর্তৃপক্ষের সচিব কমিটির সচিব হবেন। কমিটিতে সদস্যরা তিন বছরের জন্য মনোনীত হবেন। কর্তৃপক্ষ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ভূমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক পর্যটন ও নগর উন্নয়ন কার্যাবলী হাতে নেবেন। কৃষিভূমি, বনভূমি, নিম্নভূমি, জলাভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজীপুর শহর ও তৎসলগ্ন এলাকায় পরিকল্পনা, উন্নয়ন, সংস্কার এবং সম্প্রসারণের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়নের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৪’র কার্যবিবরণীতে পরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনসাধারণকে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (জিডিএ) গঠন করা হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন’-এর খসড় প্রণীত হয়। খসড়া বিলটি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। বিলটিতে সরকারি টাকা ব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত থাকায় সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে।