দেশের সবচেয়ে বড় আন্ডারপাস খুলছে শিগগিরই
৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:৫২
ঢাকা: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক আন্ডারপাস ‘সুরসপ্তক’ শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে। বিমানবন্দর সড়কের এমইএস মোড়ে আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। দেয়ালের সৌন্দর্যবর্ধন আর ইলেকট্রিক লাইন টানার কাজ চলছে এখন। আন্ডারপাসটি নির্মাণে যুক্ত সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড বলছে, আর দুই মাসের মধ্যেই এসব কাজ শেষ করে আন্ডারপাসটি চালু করা সম্ভব হবে।
আন্ডারপাসটি অবশ্য স্মৃতিবিজড়িত। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের ঠিক এই জায়গাটি দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়েই দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে বাসচাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মিম। এরপর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। সপ্তাহ দুয়েক পর ১২ আগস্ট এই আন্ডারপাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
আন্ডারপাস ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর সড়কের তলদেশ ভেদ করে ৪২ মিটার লম্বা চারটি সুড়ঙ্গ। এই চারটি সুড়ঙ্গের মুখই এই আন্ডারপাসের প্রবেশ ও বহির্গমন পথ। আন্ডাপাসটির উচ্চতা ১৫ মিটার, যা প্রায় ১০ জন মানুষের উচ্চতার সমান। পাশাপাশি এক সারিতে ১০ জন হেঁটে যাওয়ার মতো প্রশস্ত করে তৈরি করা হয়েছে এটি।
এটি কেবল দেশের সবচেয়ে বড় আন্ডারপাসই নয়, এটি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন আন্ডারপাসও। এর ভেতরের কাঠামোটি ডিজাইন করা হয়েছে অনেকটা প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামের মতো করে। সেখানে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি, নানা ধরনের চিত্রকর্ম ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো থাকবে, যার কাজ চলছে পুরো গতিতে। এরই মধ্যে এস্কেবেটর ও লিফট সংযোজনের কাজও শেষ।
আন্ডারপাস নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত একজন প্রকৌশলী জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এরপর করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ কাজ আরও পিছিয়ে যায়। এখন আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ শেষের দিকে চলে এসেছে।
সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, আন্ডারপাসটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে ভেতরে দিনে সূর্যের আলো ও রাতে চাঁদের আলো অনায়াসে ঢুকবে। এটি এমন একটি আন্ডারপাস যেখনে সড়কের মাটি ওপর থেকে খুঁড়তে হয়নি, মাটির নিচে সড়ঙ্গ করে পুশবক্স পদ্ধতিতে এর নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের সৌন্দর্যবর্ধনের কিছু কাজ চলছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্ডারপাসের অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হবে।
আন্ডারপাসের ভেতর ঘুরে দেখা গেছে, রঙ করার জন্য দেয়াল ঘষামাজা এবং বিভিন্ন ডিসপ্লে লাগানোর কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। আন্ডারপাসের দুই দিকে দুইটি করে উভয়পাশে চারটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। আন্ডারপাসের ভেতরের অংশ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাখা হবে। র্যাডিসন অংশে পথচারীদের বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
আন্ডারপাস ঘিরে রাস্তার দুই পাশেও দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা হয়েছে । দীর্ঘ র্যাম্প ধরে নামতে হয় আন্ডারপাসে। হুইল চেয়ার বা ট্রলি নিয়ে ওঠানামার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এতে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশুরা সহজেই আন্ডারপাস ব্যবহার করতে পারবে।