Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কার হচ্ছে রাসায়নিক রাখার শেড, নতুন আরেকটি নির্মাণের চিন্তা


১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:০১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাহাজ থেকে খালাসের পর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ রাখার শেডটিকে সংস্কার এবং আরও একটি আধুনিক শেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বিপর্যয় এড়াতে আগাম সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বৈরুতের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির কোনো আশঙ্কা বন্দরে নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক এবং যে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ চার দিনের মধ্যে খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসকে অনুরোধ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। খালাস অযোগ্য এ জাতীয় নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পক্ষেও মত আছে সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে দু’জন রসায়নবিদ নিয়োগের বিষয়েও সাম্প্রতিক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

লেবাননে বিস্ফোরণের পর গত আগস্টে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে দেশে সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অননুমোদিত স্থানে বিস্ফোরক, প্রথম শ্রেণির পেট্রোলিয়াম, প্রজ্জ্বলনীয় তরল পদার্থ, প্রজ্জ্বলনীয় কঠিন পদার্থ ও রাসায়নিক মজুত না করার অনুরোধ করে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে যেসব পদার্থের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ইমালশান সিসমিক, পাওয়ারজেল সিসিমিক, সিসিমিক ডেটোনেটর, চার্জেস ডেটোনেটর, ইলেকট্রিক ডেটোনেটর ও টিএনটি এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, সালফার, পটাশিয়াম ক্লোরেট এবং ফসফরাসসহ ২১ ধরনের প্রথম শ্রেণির পেট্রোলিয়াম, প্রজ্বলনীয় তরল ও কঠিন পদার্থ।

বিস্ফোরক পরিদফতরের চিঠির পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৯ আগস্ট সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিউল বারীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে বন্দরের দু’জন পরিচালক (নিরাপত্তা এবং পরিবহন), কাস্টমসের একজন যুগ্ম কমিশনার, পরিবেশ অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি এবং কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষককে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কমিটির প্রধান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আসেনি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে এক লাখ ২৬ হাজার ২১৯ প্যাকেজে ৫ হাজার ৭৪১ টন নিলামযোগ্য পণ্য পড়ে আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩৯৫ প্যাকেজ ‘বিপদজনক’ রাসায়নিক পণ্য। দুই দশকের বেশি সময় ধরে বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকা এসব পণ্য নিলামের মাধ্যমে খালাসের ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পণ্য চালানের নথিপত্র কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করেছে বন্দরের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার ও টার্মিনাল ম্যানেজার।

তবে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা সব রাসায়নিকই ‘বিপদজনক’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপদজনক বলতে গেলে অনেককিছুতেই ঝুঁকি আছে। আমরা যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি, সেটাও কিন্তু দাহ্য পদার্থ। বন্দরে আছে ক্যালসিয়াম অক্সাইড, সোডা অ্যাশ টাইপের কেমিকেল। সেগুলো উচ্চমাত্রার দাহ্য বলা সমীচীন নয়। বন্দর দিয়ে যেসব কেমিকেল আসে, তার মধ্যে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই সরাসরি চলে যায়। ১০ শতাংশের মতো কাস্টমসের কায়িক পরীক্ষা কিংবা আমদানিকারকের চাহিদা মোতাবেক পি-শেডে রাখা হয়। সেটা নিয়ে খুব বেশি ঝুঁকি আছে বলে আমরা মনে করি না। এরপরও আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। এনবিআর জানিয়েছে, সাত দিনের মধ্যে রাসায়নিকগুলো নিলামে তোলা হবে।’

তবে এর মধ্যেই বন্দরের অভ্যন্তরে পি-শেডকে ঝুঁকিমুক্ত করা নিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ের এক সভায়। সূত্রমতে, পি-শেডকে বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হবে। এর ভেতরে স্মোক ডিটেক্টর, পাঁচটি তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং শেডের বাইরে ন্যূনতম পাঁচটি ইলেকট্রিক ব্লোয়ার মেশিন স্থাপন করা হবে। শেডের অভ্যন্তরে নিয়মিত তাপমাত্রা পরিমাপ করে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগ পি-শেডের একটি অংশে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করবে। যেসব রাসায়নিক ৩০ ডিগ্রি বা তার চেয়ে কম মাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, সেগুলো সেখানে রাখা হবে। নিরাপত্তা বিভাগ পি-শেডের আশপাশে গাড়ি প্রবেশের যত গেট আছে, সেগুলো বন্ধ করবে। পরিবহন বিভাগ শেডের পাশে রাখা আমদানি করা গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেবে।

আমদানি করা উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক পদার্থ এবং রাসায়নিক খালাসের পর রাখার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) কোড ব্যবহার করে স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলজি’র একটি শেড তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্দরের কর্মকর্তাদের মধ্যেও দ্বিমত আছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পি-শেড, যেটাতে এখন আমদানি করা রাসায়নিক রাখা হচ্ছে, সেটাকে আমরা সংস্কার করব। একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেটার রিপোর্ট আমরা এখনো পাইনি। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের সুপারিশকে আমলে নিয়েই সংস্কারের কাজটা শুরু হবে। তবে প্রাথমিকভাবে সংস্কারের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে অত্যাধুনিক শেড নির্মাণের বিষয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে একটু দ্বিমত আছে। দেখা গেল, ৫০-১০০ কোটি টাকা দিয়ে একটা শেড বানানো হলো, কিন্তু সারাবছরে সেখানে ১০ কোটি টাকারও মালামাল রাখা হয়নি। আলটিমেটলি এটা লস হবে। তার চেয়ে আমরা আলাদা অফডক করার কথা বলতে পারি। পি-শেড সংস্কার হলে সেখানে তো রাখা যাবেই।’

সূত্রমতে, ডেঞ্জারাস গুডস অ্যাক্ট, ১৯৫৩ অনুসারে বিপদজনক পণ্য ও কনটেইনারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌবাহিনী। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নৌবাহিনী যেসব পণ্য বা কনটেইনার সরাসরি খালাসের সিদ্ধান্ত দেবে না, সেগুলোই শুধু বন্দরের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করা হবে। অনেকসময় নৌবাহিনী সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও কাস্টমসের শুল্কায়ন ও কায়িক পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় পণ্য আটকে থাকে। এই সংকট নিরসনে ঝুঁকি আছে এমন পণ্য জাহাজ থেকে নামানোর চারদিনের মধ্যে খালাসের প্রাক-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কাস্টমস কমিশনারকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে বন্দর। আর নিলামের পর সেটি যেন ২-১ দিনের মধ্যেই খালাস করা হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বন্দরে পড়ে থাকা রাসায়নিক খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বন্দরে রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লাঙ্কেট, ডাইথোনাইট এবং সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, নাইট্রো গ্লু সলিউশন, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান, বেভারেজ কনসেন্ট্রেট এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার জাতীয় পদার্থ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খালাস জাহাজ দাহ্য বন্দর বিস্ফোরক সংস্কার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর