Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে নদীতে ৪৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০০


১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:২৮

ঢাকা: বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চরবগী চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে টিনের চালার নিচে ক্লাস করা শিক্ষার্থীরা ইটপাথরের মজবুত দোতলা পায় ২০১৭ সালে। দোতলা বিল্ডিং পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়েছিল তারা। কিন্তু এবারের বন্যা তাদের সেই খুশি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কালাবদর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের দোতলা বিদ্যালয়টি।

চরবগী চৌধুরীপাড়ার স্কুলের মতো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রামের উলিপুরের শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুয়ান সতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এই এলাকার শিক্ষার্থীদের একমাত্র বিদ্যালয় ছিল এটি। এখানে ৮৩ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতেন চারজন শিক্ষক। এভাবেই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে নদীতে গেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শরীয়তপুরের নড়িয়ার বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪৭টি স্কুল। এছাড়া প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত। দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, এবার ঘুর্ণিঝড় আম্পান, কয়েকদফা বন্যা আর জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাদেশে ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর ৩ হাজার ৮৬৬টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি বিদ্যালয় চলে গেছে নদীগর্ভে। রাজশাহী বিভাগে ৭৬১টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৫টি। রংপুরে ৬৬৪টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি নদীতে চলে গেছে। এছাড়া সিলেটে ৫৮২টি, ময়মনসিংহে ৩৮৮টি, চট্টগ্রামে ৫২টি, বরিশালে পাঁচটি ও খুলনায় একটি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাতটি নদীতে তলিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীভাঙন এলাকায় কত কিলোমিটার বা কতটুকু দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে তার সুর্নিদিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তবে এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় মজবুত কিংবা পাকা স্থাপনা নির্মাণ না করার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। তারপরেও এমন জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে এবং প্রতিবছরই কোনো না কোনো বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তবে এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে ৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, সেসব বিদ্যালয় নতুন করে স্থাপন করা হবে। সেজন্য এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ তবে এবার আর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডির সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী ২৫ বছরে বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হবে না- এমন নিশ্চয়তা নিয়ে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ হবে। আর তা সম্ভব না হলে নদী ভাঙন এলাকায় এবার টিনশেড কিংবা অন্য উপায়ে অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে।’

এছাড়া অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিদ্যালয়গুলো মেরামতের জন্যও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আকরাম আল হোসেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় ফের খুলে দেওয়া হলে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারে সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত মেরামত করতে বলা হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস জলোচ্ছ্বাস নদীগর্ভে বিলীন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর