মিয়ানমারের মানচিত্র থেকে উধাও রোহিঙ্গা গ্রাম
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:০০
নাফ নদী থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কান কিয়া গ্রামে কয়েকশ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের সময় কান কিয়া আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পুরো গ্রাম ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গিয়ে দেখেছেন গ্রামের যেটুকু চিহ্ন দাঁড়িয়ে ছিল তাও বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
এবার মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকেও কান কিয়া গ্রামটিকে মুছে ফেলা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০১৯ সালে মিয়ানমার সরকার দেশটির নতুন যে মানচিত্র তৈরি করেছে সেখানে কান কিয়া গ্রামের অস্তিত্ব নেই। মানচিত্র থেকে গ্রামটির নাম মুছে ফেলা হয়েছে।
এদিকে, বার্তাসংস্থা রয়টার্সের কাছে প্ল্যানেট ল্যাব থেকে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি থেকে দেখা যায়, কান কিয়া গ্রামটি আগে যেখানে ছিল সেখানে এখন ডজনের বেশি সরকারি ও সামরিক ভবন গড়ে উঠেছে। ছবিতে পুলিশ ঘাঁটির জন্য দেওয়া আঁকাবাঁকা বেড়াও দেখতে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি, মিয়ানমারে কর্মরত জাতিসংঘের কর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন – নতুন মানচিত্রে গুঁড়িয়ে ফেলা কান কিয়া গ্রামের নাম আর নেই। বরং, ওই জায়গাটিকে এখন কাছের মংডু শহরের বর্ধিতাংশ বলা হচ্ছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানাচ্ছে, কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবির মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন – কান কিয়ার মতো অন্তত ৪০০ গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ধ্বংস করে ফেলা অন্তত এক ডজন রোহিঙ্গা গ্রামের নাম বর্তমান মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখাইন রাজ্যের পুনঃগঠনের কাজ দেখভাল করছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে তাদের কাছে গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কারণ এবং কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা হবে তা জানতে চাওয়া হলে, তারা এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মিয়ানমারের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে (জিএডি) যোগাযোগ করতে বলে। সেখানে যোগাযোগ করেও কারো কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স।
এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক দূত ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমার সরকার ইচ্ছা করেই রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা কীভাবে সেই জায়গায় ফিরবে, যার কোনো নাম নেই বা যেখানে তাদের বসবাসের কোনো চিহ্ন নেই?
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সন্ত্রাস দমনের নামে ওই অভিযান চালালেও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। ওই শরণার্থীদের বর্ণনায় সাধারণ মানুষের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র ফুটে ওঠে। সম্প্রতি, মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রাখাইনে গণহত্যার উদ্দেশ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের বিরদ্ধে রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে শুনানি চলছে।