‘বৈষম্য দূরীকরণে মৌলিক কাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি প্রত্যাশা’
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৩৫
ঢাকা: সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বৈষম্য দূরীকরণে কিছু মৌলিক কাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি প্রত্যাশা বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য রাজনৈতিক লিগ্যাসি (উত্তরাধিকার) রেখে যেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ‘সময়টা কেমন’ শীর্ষক সারাবাংলা ফোকাস অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ভার্চুয়াল এ আলোচনায় চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, সামাজ-সংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার করতে হবে। এটা করতে গেলে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই যদি ধরেন, ১৯৮২ সালের অর্ডিন্যন্স দিয়ে চলছে। সংসদীয় কমিটি আইন তৈরির চেয়ে নির্বাহী কাজে ব্যস্ত থাকে বেশি। তারা কিন্তু আইনের সংস্কারের কথা বলে না। প্রথম কথা হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। আমাদের জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে।’
নতুন সময়ের প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং উনি দীর্ঘতম সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। উনার কাছে নিবেদন করব- এই মূর্হতে তার ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় যে, তিনি তার রাজনৈতিক লিগ্যাসি (উত্তরাধিকার) কী রেখে যাবেন। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের কথায় উনাকে স্মরণ করবে। পাশাপাশি সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বৈষম্য দূরীকরণে কিছু মৌলিক কাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি প্রত্যাশা।’
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২৯ জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঠিক করা যাবে না। আপনি যদি গোড়ায় হাত না দেন, মূল্যবোধের জায়গায় হাত না দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় হাত না দেন, শাসন ব্যবস্থায় জনমতের প্রতিফলন ঘটানোর যে প্রক্রিয়া সেটা নিশ্চিত না করেন- তাহলে কি হবে?’
তিনি বলেন, ‘ভুটানের লোকেরা তো বলছে না, তারা অস্ট্রেলিয়া হবে, সিঙ্গাপুর হবে। অথচ আমাদের সাংঘাতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য থাকার পরও বলছি, আমরা অস্ট্রেলিয়া হব, সিঙ্গাপুর হব। কেন? আমরা বাংলাদেশিই থাকব। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। এজন্য গণতন্ত্রের অধিকার চর্চার ক্ষেত্রগুলো প্রশস্থ রাখতে হবে। সমালোচনা নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। আমাদের গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ঠিক করতে হবে। সরকারের ও জনগণের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। একজন ডাক্তার আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের ডাক্তার বা বিএনপির ডাক্তার হতে পারেন না। পেশাজীবীদের আমরা এমনভাবে রাজনীতিকরণ করে ফেলেছি সেখানে বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
ঢাকা কনসালটিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ যখন বাংলাদেশে শুরু হয় তখন আমার উপলব্ধি ছিল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের জন্য যেমন মুক্তিযোদ্ধারা তৈরি হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে চিকিৎসকরা হয়তো করোনা মোকাবিলায় তৈরি হতে হবে। কিন্তু তা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘জিডিপি বৃদ্ধি মানে উন্নতি নয়। উন্নতি মানে হচ্ছে- গুণগত শিক্ষা, ভালো চিকিৎসা, বাসযোগ্য পরিবেশ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত কাজ করতে পারা।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানী। এটি সারাবাংলা ও জিটিভিতে সরাসারি সম্প্রচার করা হয়।
ডা. লিয়াকত আলী নাঈমুল ইসলাম খান সাব্বির আহমেদ সারাবাংলা ফোকাস সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান