Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে আসবে বিলুপ্তপ্রায় মহাশোল, চলছে গবেষণা


১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৫৯

নেত্রকোনা: বাংলাদেশের মিঠাপানির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ‘মহাশোল’। নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর আর কলমাকান্দার পাহাড়ি স্বচ্ছ পানি আর সোমেশ্বরী ও কংস নদী মহাশোল মাছের আবাসস্থল। একসময় প্রচুর পরিমাণে এ মাছ পাওয়া যেত। ভোজনরসিকদের কাছে কদর থাকলেও সুস্বাদু এ মাছ এখন উচ্চমূল্যেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন পর দেশি প্রজাতির বিপন্ন মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনে মাঠে নেমেছেন গবেষকরা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, গবেষণা সফল হলে নদ-নদী ও পুকুরেও মিলবে মহাশোল। কম মূল্যেই খেতে পারবেন ভোক্তারা। আগামী দুই বছরের মধ্যে গবেষণার ফলাফল হাতে পাওয়া যাবে।

জানা যায়, ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ে সৃষ্ট খরস্রোতা সোমেশ্বরী নদী সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোণার দুর্গাপুরে প্রবেশ করেছে। নদীর পাথর-নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে ‘পেরিফাইটন’ নামে এক ধরনের শ্যাওলা জন্মে। যা মহাশোলের প্রধান খাদ্য। মহাশোল দেখতে অনেকটা মৃগেল মাছের মতো। তবে এর আঁশগুলো আরও বড় এবং পরিণত মাছের আঁশ শক্ত, পাখনা ও লেজ রক্তিম।

পাহাড়ের পাদদেশে সোমেশ্বরী নদীর উৎসমুখ বন্ধ থাকায় এবং শুকনো মৌসুমে নদী শুকিয়ে মহাশোলের বসবাস ও বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ায় মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর ধরে এ মাছ পাওয়া না গেলেও, এ বছর প্রবল বর্ষার কারণে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা মহাশোল ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।

এরইমধ্যে সোমেশ্বরী নদীর জেলেদের কাছ থেকে ২৫টি মহাশোল কিনে গবেষণা পুকুরে মজুদ করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। জেলেরা এসব মাছ প্রতি কেজি তিন থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রতিটি মাছের ওজন এক কেজি থেকে সাড়ে পাঁচ কেজি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম কোহিনুর জানান, দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মহাশোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন এবং পোনা উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করার জন্য কয়েক বছর চেষ্টার পর এবার মহাশোল মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে যে ৬৪ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ রয়েছে, মহাশোল তার মধ্যে অন্যতম। এ মাছটি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীতে পাওয়া যেত। কয়েক বছর ধরে দেখা না মেললেও চলতি বছর ৫০টি মহাশোল মাছ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে ২৫টি মহাশোল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে মহাশোলের দুটি প্রজাতি- ‘সোনালী মহাশোল’ এবং ‘লাল-পাখনা মহাশোল’।”

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বিশ্বে মহাশোল মাছের বহু প্রজাতি আছে। ইতোমধ্যে একটি প্রজাতির (নেপালি) মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল গবেষণায় সফল হওয়ায় পর দেশের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। অনেকে পোনা নিয়ে পুকুরে চাষ করছেন। শুধু মহাশোল নয়, হারিয়ে যাওয়া আরও ২৩ প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে চাষি পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

তিনি আরও জানান, সোনালী মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনের কাজ সফল হলে শিগগিরই হারিয়ে যাওয়া সোনালী মহাশোল সুলভমূল্যে ভোক্তাদের খাবার টেবিলে ঠাঁই পাবে।

গবেষণার ফলাফল নদ-নদী বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাশোল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর