Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিকশা নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধন শুরু, মাঠে নামছে ডিএসসিসি


১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:২৬

ঢাকা: রাজধানীর সড়কে দুর্ঘটনা ও যানজট সৃষ্টিতে কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি রিকশাসহ বেশকিছু অযান্ত্রিক বাহন। এমন যুক্তিতে এসব বাহন রাজধানীর সড়ক থেকে তুলে দিতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর পক্ষে-বিপক্ষে সৃষ্টি হয়েছিল জনমত। এতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত বছরের জুলাইয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অবৈধ রিকশাসহ অযান্ত্রিক বাহন শহর থেকে অপসারণ করবে এবং বৈধ বাহনগুলো লেন মেনে গলির ভেতরে চলাচল করবে। কিন্তু একবছরের বেশি সময় পার হলেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন দুই সিটি। ফলে নিয়ন্ত্রণেও আসেনি এসব বাহন। উল্টো বৈধ-অবৈধ সব ধরণের অযান্ত্রিক বাহন চলছে সমানতালে।

তাই এবার এসব বাহন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উল্টো চলতি বছর এসব অযান্ত্রিক বাহনগুলোর নিবন্ধন দিয়ে ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। এতে একদিকে যেমন অবৈধ সব অযান্ত্রিক বাহন নিয়ন্ত্রণে আসবে, অন্যদিকে বাৎসরিক রাজস্ব আদায়ও হবে ডিএসসিসির। এমনটাই মনে করছে সংস্থাটি।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ডিএসসিসির নগর ভবনে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটির সঙ্গে রাজধানীর রিকশা-ভ্যান শ্রমিক-মালিক সমিতির ২২ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছিলেন, অনতিবিলম্বে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। কিন্তু ঘোষণার পর বছর পার হলেও এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ সে সময় রিকশার বিকল্প হিসেবে বিআরটিসির ৩০টি বাস নামানোর কথা ছিল ডিএসসিসির, কিন্তু বাসও নামেনি। সেই সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোর অসহযোগিতা ছিল দৃশ্যমান। যেকারণে নিয়ন্ত্রণে আসেনি অযান্ত্রিক বাহনগুলো।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডিএসসিসির নতুন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অযান্ত্রিক বাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে এসব বাহনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার। এতে করে শহরে কি পরিমান অযান্ত্রিক বাহন চলছে তার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় হবে এবং সড়কে এসব বাহনের ধারণক্ষমতা কেমন তাও নিরুপণ হবে। সেই সঙ্গে নির্ধারিত সংখ্যক বাহনকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও সম্ভব হবে।

মেয়র শেখ তাপস বলেন, “ঢাকা শহরকে অনেক কবি-সাহিত্যিক ‘সিটি অফ রিকশা বা রিকশার নগরী’ বলে চিত্রিত করেছেন। এটা আমাদের ঐতিহ্য। রিক্সাসহ আমাদের যে ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে আমরা নিবন্ধন ও নবায়নের আওতায় আনছি। এর মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধিত অযান্ত্রিক যানবাহন ছাড়া আর কোন অযান্ত্রিক যানবাহনকে ঢাকা শহরে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এরই মাঝে ডিএসসিসি এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের কার্যকারিতা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর ফলে কোন সড়কে ধীর গতির যানবাহন চলবে, কোন সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে, এগুলো আমরা নির্ণয় করব। এই নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীর গতির যানবাহনগুলো যেমনি নিবন্ধনের আওতায় আসবে তেমনি নিয়মের আওতায়ও আসবে। এটা শুধু নিবন্ধন কার্যক্রমই নয়। এই কার্যক্রম নির্বাচনি ইশতেহারে বর্ণিত সচল ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। সুনির্দিষ্টভাবে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সড়ক নির্ধারণ করে দেবো এবং চালকদেরকেও আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব। এরই ফলে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত ব্যবস্থার আওতায় আসবে।’

রিক্সাসহ অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধন প্রদানের মাধ্যমে যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকার চাইতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘আমার নির্বাচনি ইশতেহারে সচল ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা আমি দিয়েছি, সে পরিকল্পনায় যেমনি দ্রুতগতির যানবাহন থাকবে তেমনি ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনও থাকবে বলে উল্লেখ করেছি। এই ঢাকা শহরের দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় রিক্সা ও অযান্ত্রিক যানবাহনের কোন নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাই বলে কি ঢাকায় রিকশা চলে না? বাস্তবতা হলো, ঢাকায় রিকশা চলে এবং সেগুলো সবই অবৈধভাবে চলে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনা মানে অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা।’

এদিকে, সংস্থাটি ইতোমধ্যে লাইসেন্সের আবেদনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে। এ কার্যক্রম ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ১০০ টাকা (অফেরতযোগ্য) দিয়ে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে বলা হয়েছে রিকশা, ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, টালিগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি তথা অযান্ত্রিক যানবাহন মালিকদেরকে। ডিএসসিসির নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে গিয়ে নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবে মালিকরা। তবে এ নিবন্ধন সময়ের মধ্যে যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অযান্ত্রিক পরিবহনে ব্যাটারি লাগানো হয়েছে তাদের ব্যাটারি খুলে পুনরায় আগের মতো অযান্ত্রিক বাহন হিসেবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলা হয়ে ডিএসসিসি থেকে। যারা এ নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযানে নামবে ডিএসসিসি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানীতে বৈধ রিকশা ও ভ্যানের সংখ্যা সাড়ে ৭৯ হাজার। কিন্তু অবৈধ রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এ সব অবৈধ রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, মহানগর রিকশা মালিক লীগ, রিকশা ও ভ্যান মালিক-শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ, রিকশা এবং শ্রমিক-মালিক লীগ, ঢাকা সিটি মুক্তিযোদ্ধা রিকশা-ভ্যান মালিক কল্যাণ সোসাইটি সহ নামে বেনামের প্রায় ২৮টি সংগঠন। কিন্তু কার্যত অতীতে এসব অবৈধ বাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বাধার মুখে পড়তে হতো ডিএসসিসিকে।

তবে ডিএসসিসি মনে করছে, এবারের নতুন সিদ্ধান্তে একদিকে অবৈধ রিকশা অপসারণ সহজ হবে, অন্যদিকে এসব নামে-বেনামে গড়ে উঠা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও সহজ হবে।

ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক (উপ-সচিব) সারাবাংলাকে বলেন, ‘শহরে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে অবাধে বৈধ অবৈধভাবে চলা রিকশাসহ বিভিন্ন অযান্ত্রিক বাহনগুলোকে সহজে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয় পরিকল্পনার নিয়েছি আমরা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা চাচ্ছি বর্তমানে কি পরিমান অযান্ত্রিক বাহন আছে সেটা নিরুপন করতে। এজন্য আমরা সহজ পদ্ধতি হিসেবে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে বলেছি অযান্ত্রিক বাহনের মালিকদের। এ আবেদন শেষে আমরা দেখতে চাই কি পরিমান আবেদন পড়েছে। আবেদনের আলোকে পরবর্তীতে আমরা পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবো শহরে কি পরিমান বাহন চলাচলে ধারণ ক্ষমতা থাকবে। সে অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘অযান্ত্রিক বাহনগুলো নিয়ন্ত্রণে একটা পর্যালোচনা কমিটি রয়েছে। তাদের মাধ্যমে নিবন্ধিত বাহনগুলোকে ঠিক কি কি সুবিধার আওতায় আনা হবে এবং অনিবন্ধিত বাহনগুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাও নির্ধারণ হবে। তবে আমরা মনে করি এ প্রক্রিয়ায় অবৈধ বাহনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছে সেগুলোর বিরুদ্ধেও শক্ত অবস্থান তৈরি হবে। সেই সঙ্গে নিবন্ধনের মাধ্যমে এসব বাহনগুলো থেকে নির্ধারিত লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও করবে ডিএসসিসি।’ তবে লাইসেন্স প্রাপ্ত বাহনগুলো ঠিক কি ধরণের সুবিধা পাবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, অযান্ত্রিক বাহনের বিপরীতে যেসব বাহনে ব্যাটারিযুক্ত করে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র। মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোটরচালিত, যন্ত্রচালিত, ইঞ্জিনচালিত, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ বিষয় মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘এ ধরণের যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া হবে না এবং এই ধরণের সব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ঠিক কবে থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘যৌক্তিক সময়েই শুরু হবে এ কার্যক্রম। আপাতত আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই সঙ্গে যারা এতোদিন অযান্ত্রিক বাহনে ব্যাটারি লাগিয়ে চালিয়েছে তারাও যাতে করে ব্যাটারি খুলে আবারও অযান্ত্রিক হিসেবে আবেদন করতে পারে সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’ তবে নির্ধারিত সময় শেষে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

অপসারণ অযান্ত্রিক বাহন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বৈধ বাহন রিকশা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর