“খিচুড়ি রান্নার জন্য ‘হাস্যকর’ বিদেশ সফর হাসিনার আমলেই সম্ভব”

ঢাকা: খিচুড়ি রান্নার শেখার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের অভিনব ও হাস্যকর বিদেশ সফরের তামাশা কেবল শেখ হাসিনার আমলেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘একটি সংবাদের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। খিচুড়ি রান্না প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। এর আগে পুকুর খননের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। এছাড়াও পাবদা মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিতে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়েছিলেন। এসব অভিনব ও হাস্যকর তামাশা কেবল শেখ হাসিনার আমলেই সম্ভব।’

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, “আবহমানকাল ধরেই উল্লিখিত বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের রপ্ত। অথচ সেইসব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানোতে একটি প্রবাদ মনে পড়ে যায়— ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’। মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ফালতু কাজে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো মূলত ‘মিডনাইট’ নির্বাচনে সহযোগিতা করায় সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দেওয়া। যে সরকারের আমলে একটা বালিশের দাম সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং একজন রোগীকে আড়াল করতে সাড়ে সাইত্রিশ লাখ টাকার পর্দা লাগে, সেই সরকার যে আগাগোড়াই লুটপাটের চেতনায় অনুপ্রাণিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”

‘বিএনপি চিরাচরিত মিথ্যাচার করছে। বাড়তি ৮২ হাজার করোনা রোগীর পরিসংখ্যান তারা কোথায় পেয়েছে? এই তালিকা আমরা জানতে চাই’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের  এই বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, “বানোয়াট ও অসত্য কথা বলার ফেরিওয়ালা আপনারা। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, গত ১১ সেপ্টেম্বর বহুল প্রচারিত ‘ডেইলি নিউ এজ’ পত্রিকাটির প্রধান শিরোনাম দেখুন। ৮২ হাজার নয়, ৮৪ হাজার করোনা রোগী সরকারের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”

তিনি বলেন, ‘ডিজি হেলথ সার্ভিস সরকারি নাকি বিরোধী দলীয় প্রতিষ্ঠান? তাদের ডাটাবেজ থেকে ৮৪ হাজার রোগীর নাম হারিয়ে গেল কিভাবে? এই তথ্যটি এমন একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যেটি জনগণের নিকট বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম। এই সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে— সরকারি ডাটাবেজে এলাকাভিত্তিক করোনার সংখ্যা ও সংক্রমণের হারেরও তেমন তথ্য নেই।’

‘উল্লিখিত পত্রিকাটি পাঠ করে নিজের আত্মমর্যাদার কথা চিন্তা করে ওবায়দুল কাদেরের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত,’— বলেন রহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘সরকার শুরু থেকেই করোনা রোগীর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। জাতির সামনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। করোনার টেস্ট কমিয়ে দিয়ে করোনা রোগী নেই বলে জনগণকে ধাপ্পা দিয়ে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এই ধাপ্পাবাজির উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনা থেকে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখা।’

রিজভী বলেন, ‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মিথ্যাচারের যন্ত্র বানিয়েছে সরকার। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনও আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার মধ্যে কোনো  আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। সরকারি হিসাবে গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। দৈনিক সংক্রমণের পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুতেও অনেক দেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের আশঙ্কা— এইভাবে চলতে থাকলে এ দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। করোনায় মৃত্যুবরণ ও সংক্রমণে হাসপাতাল কিংবা কবরস্থানেও যেন ঠাঁই নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আযাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুর রহমান, মোরশেদ আলমসহ অন্যরা।

খিচুড়ি খিচুড়ি রান্না বিএনপি বিদেশ সফর রুহুল কবির রিজভী সরকারি কর্মকর্তা