‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, পাটকল শ্রমিকদের ঠকানো যাবে না’
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:১৮
ঢাকা: পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, পাটকল শ্রমিকদের ঠকানো যাবে না। ওদের বকেয়া একবারে দিয়ে দাও।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডেমরার করিম জুট মিলসে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের হাতে সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়ে তিনি একথা বলেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে মাঝে-মধ্যেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিতাম। এভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা এনে শ্রমিকদের পরিশোধ করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, জনগণকে একসময় জবাবদিহি করতে হবে। তাই কীভাবে এটির সমাধান করা যায় সেই ব্যবস্থা করো। তখন আমি শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করি। প্রধানমন্ত্রী বললেন, শ্রমিকদের খুশি মনে বিদায় দেওয়া যায় কি না। এরপর আধুনিকায়ন করে যদি মিল চালু করতে পারি সেটা পরে দেখা যাবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, সমাধানের ব্যবস্থা করে প্রস্তাব দিতে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটা প্রস্তাব দেই। তিনবছরে এই টাকা দেওয়ার কথা বলি। কারণ, তখন করোনা চলে আসে। আমাদের কাছে ওই সময় টাকা ছিল না।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে বললেন, গাজী ওদেরকে (শ্রমিকদের) তুমি ৩ বছরে টাকা দিবা? ওরা তো তা একবছরে খেয়ে ফেলবে। ওরা তো টাকা রাখতে পারবে না। এভাবে দিলে উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমি বললাম, আপা আমরা তো করোনাকালীন চিন্তা করে প্রস্তাব দিয়েছি। আপনি এত টাকা দিতে পারবেন কি না? আমরা সেটা বিবেচনা করে তিন বছরের কথা বলেছি। আমাদের সাহস হয়নি এক বা দুই বছরের কথা বলতে। করোনার কারণে সবাই টাকা চাচ্ছে। আপনি দিচ্ছেনও। কিন্তু আমাদের সাহস হয়নি।’
আবেগ তাড়িত কণ্ঠে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, দেখো বঙ্গবন্ধু কিন্তু এদের নিয়েই আন্দোলন করেছেন। শ্রমিকদের অনেক অবদান আছে। তাদের ঠকানো যাবে না। তাদেরকে তুমি একবারে টাকা দিয়ে দাও। আমি বললাম, আপনি ব্যবস্থা করে দিলে খুশি হবো আপা। তিনি আমাকে প্রস্তাব দিতে বললেন। আমরা একবারে টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠালাম। আর প্রস্তাব পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, তোমার আসার দরকার নেই। সচিবদের পাঠাও আমরা স্টাডি করি। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু প্রস্তাবে সই করতে চাননি। তিনি বলেন, আমি শ্রমিকদের বিদায় করে দেব। সচিবরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এটা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। এরপর প্রধানমন্ত্রী চোখের পানি ফেলেন। চোখের পানি পড়ছে আর প্রধানমন্ত্রী সই করছেন। কি যে আবেগের মুহূর্ত এটা!’
শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হওয়ার পর সবাই আমার কাছে এসেছেন। বিশেষ করে যারা অবসর নিয়েছেন তাদের অবস্থা আরও খারাপ। যারা চলমান ছিলেন তারা আন্দোলন করে দুই মাস পর পর টাকা পেতেন। যারা অবসরে গিয়েছেন তাদের অবস্থা মারাত্মক খারাপ। কেউ অসুস্থ, কারও ক্যানসার, আবার কেউ হাসপাতালের বিল দিতে পারছেন না। তাই বলতে চাই, জনগণের প্রতি তথা শ্রমিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে ভালবাসা, এটা চিন্তা করা যায় না। তিনি কি করে সব বুঝে ফেলেন?’
জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোতে বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি চালু মিলে কর্মরত সকল স্থায়ী শ্রমিকর গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরি অবসায়ন করে ১ জুলাই থেকে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বন্ধঘোষিত ২৫টি মিলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরপ্রাপ্ত ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে ৩টি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের নির্দেশ দেন।
আরও জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের নিমিত্তে যাবতীয় পাওনাদির হিসাব নিরীক্ষাপূর্বক চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে করিম জুটমিলের পূর্বে অবসর গ্রহণকারী ও সম্প্রতি অবসানকৃতশ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ ইতোমধ্যে ছাড় করেছে। সেই অর্থ থেকে আজ করিম জুটমিলের সকল শ্রমিকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে (ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হলো। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
করিম জুট মিলসের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শ্রমিকলীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ।
করিম জুট মিলস গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) পরিশোধ পাটকল শ্রমিক প্রধানমন্ত্রী বকেয়া বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শেখ হাসিনা