Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামের ১৬ খাল সংস্কারের সিদ্ধান্ত


১১ মার্চ ২০১৮ ১৫:৫৪

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম: প্রকল্পের মেয়াদ শুরুর আট মাস পর চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কাজ শুরু করতে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রাথমিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে তিন মাসের মধ্যে নগরীর ১৬টি খাল সংস্কারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিডিএ। সরকার ইতিমধ্যে ১৬টি খাল সংস্কারের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল পরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কথা থাকলেও সামনের বর্ষায় নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখতে প্রথম পর্যায়ে ১৬টি খালের কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের’মনিটরিং কমিটির সভায় মোশাররফ এই তথ্য দিয়েছেন।

মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোশাররফ বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে মানুষকে যাতে পানির মধ্যে সাঁতার কেটে, নৌকা নিয়ে চলতে না হয়, সেজন্য বৃষ্টি শুরুর আগে ১৬টা খাল সংস্কার করতে চাই। খালগুলো পরিষ্কার করা হবে এমনভাবে যাতে পানি দ্রুতবেগে নেমে যায়। আগামী তিন মাসে এটা সম্ভব হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান জলাবদ্ধতা থেকে চট্টগ্রাম শহরের মানুষকে মুক্তি দিতে। এজন্য তিনি প্রাথমিকভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আমরা দেখেছি গত বর্ষায় নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, দেওয়ানবাজার, সাবএরিয়া, বৃহত্তর বাকলিয়া, চকবাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট এসব এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে যে ১৬টি খাল চিহ্নিত করেছি, সেগুলো সংস্কার হলে এসব এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা মুক্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে পাস করে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিডিএকে। সেনাবাহিনী প্রকল্পবাস্তবায়নে সিডিএকে সহযোগিতা করবে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর জন্য আট মাস ধরে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়ার পর দৃশ্যমান কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে বলে সভায় জানিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান।

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান প্রস্তাব দেন, নগরীর খালগুলোর সীমানা আরএস মূলে নির্ধারণ করে তারপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামবে। এই প্রস্তাব সভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, ১৬টি খাল খনন করা হবে সেটা ঠিক আছে। তবে এটাই স্থায়ী সমাধান নয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের হাইড্রোগ্রাফার হাবিবুর রহমান পরামর্শ দেন, প্রতিটি খাল পুনঃখনন কিংবা সংস্কারের পর যেন প্রবেশমুখে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়। না হলে আবর্জনা কর্ণফুলীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ছিলেন না। তবে চসিকের পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্ণেল মো. মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, চাক্তাই খাল, মহেশ খালের আবর্জনা পরিষ্কার করলেই জলাবদ্ধতা যাবে না। মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষ যেন খালের মধ্যে আবর্জনা না ফেলে সেটা দেখতে হবে।
খালের মধ্য থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সাতদিন আগে নোটিশ দিতে হবে বলে সভায় বলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য জাফর আলম।

সভায় উপস্থিত নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদ-উল-হাসান এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, নোটিশ দিলে তারা হাইকোর্টে যাবে।

সভায় মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, খালের মধ্যে যদি অবৈধ স্থাপনা থাকে, যদি সেটা নিজের জায়গার উপর না হয়ে সরকারি জায়গার উপর হয় তাহলে নোটিশ দেওয়ার কোন দরকার নেই। সরাসরি উচ্ছেদে যেতে হবে।

সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী একেএম সামছুল করিম জানান, তারা কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষে ২৩টি স্লুইচগেট নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে। এতেও চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা কমবে।

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন- সিডিএ, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা,পানি উন্নয়ন বোর্ড যারাই জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্প হাতে নেবে, তার তদারক হবে এই মনিটরিং কমিটি থেকে। মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মনিটরিং করবেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, প্রকল্প যারাই বাস্তবায়ন করুক, মনে রাখতে হবে এটা সরকারি কাজ। এই কাজের মালিক সরকার। সুতরাং কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। সংস্থাগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা দেখতে চাই না।

সভায় ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধানপ্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মাঈনুদ্দিন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনাপরিচালক আলী মো.আল মামুন, সিডিএ’র বোর্ড সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব. মোহাং জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/ এমএইচ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

সম্পর্কিত খবর