‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলে সাধারণ মানুষের চিন্তা করেছে’
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৩৬
ঢাকা: করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণে সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কথা তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। অন্য কোনো দল হলে এটি মোটেই করত না। বরং তারা দেখতে যে, কীভাবে এখান থেকে ফায়দা লুটতে পারে কি না? কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এটি আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটি জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকার বাসভবন গণভবনে সকাল ১০টার দিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হল। সভায় সভাপতিমণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াত দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে আমাদের এই সভা। করোনাভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে এবং শুধু আমাদের দেশ বলে না সারাবিশ্বব্যাপী যেহেতু এ অবস্থার সৃষ্টি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই করোনাকে মোকাবিলা করে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি।’
‘আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর আমাদের বাংলাদেশের এমনি একটা অবস্থা, আমাদের তো শুধুমাত্র করোনার জন্য সর্বনাশ হচ্ছে সেটা তো না সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং সেটাও আমরা বলব যে, অত্যন্ত সমযোপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সেগুলো মোকাবিলা করতে পেরেছি। আশঙ্কা ছিল যে বিশাল একটা বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্যা দেখা দিতে পারে। এখনও পানি আছে কিছু কিছু নদীতে। কিছু ভাঙনও হচ্ছে। এবার নদী ভাঙনটা ব্যাপক হয়েছে। নদী ভাঙনে কিছু কিছু এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ একেবারে ঘরবাড়ি হারা হয়েছে। তারপরও এ অবস্থা মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা এবং রাজনৈতিক দল হিসাবে আমরা যদি অন্য দলগুলি দেখি যারা হয়ত শুধু লিপ সার্ভিস অর্থ্যাৎ ওই মুখে মুখে কথা বলেছে কিন্তু প্রকৃত মানুষের কাছে যেয়ে মানুষকে সাহায্য করা, সেটা কিন্তু আমরা অন্য দল বা অন্য সংস্থা; তাদের উপস্থিতিটা ওভাবে দেখিনি, এনজিও-টেনিজিও অনেকেই আছে। কিন্তু তাদেরকে আমরা ওভাবে দেখি নাই। কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীলা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সেই সঙ্গে আমি প্রশংসা করি, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। প্রশাসন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের ভূয়সী প্রশংসা করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ থেকে ২০২১ এটাই আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ১৬-১৭’র মধ্যে নামিয়ে নিয়ে আসব। এরইমধ্যে ২০ভাগ নামিয়ে এনেছি, যেখানে ৪০ভাগ ছিল। সেটা আমরা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম।’
‘করোনার কারণে আমাদের এসব কাজগুলো একটু শ্লথ হয়ে গেছে এটা ঠিক কিন্তু আমরা মনে করি যে, এই দারিদ্র্য যেন আবার মানুষকে গ্রাস করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। পাশাপাশি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আর্থিকভাবে মানুষ চলতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এই কারণে কোনোভাবে সাধারণ মানুষের যেন কষ্টটা না হয়।’
শিল্প কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যখনি করোনা দেখা দিয়েছে, তখনি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সাথে সাথে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি আর কিছু না হোক আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ আমি জানি, এ কারণে সারাবিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা দেখা দিতে পারে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্টে না পায়। সঙ্গে সঙ্গে সারের দাম আরও কমানো হলো। যেটা বিএনপির আমলে ৯০টা ছিল সেটা কমিয়ে এখন ১২ থেকে ১৩ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ঠিক এইভাবে কৃষকদের বিশেষ আমরা আলাদা প্রনোদনা প্যাকেজ দিয়ে দিয়েছি। সেখানে কৃষক যেন তার কাজ করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।’
অর্থ্যাৎ এদেশের কৃষক শ্রমিক এদেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি চাকরিজীবী বা আমাদের সব ধরনের মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ প্রণোদনার প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘অর্থ্যাৎ কোনো শ্রেণী বাদ না যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই করেছি। আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। অন্য কোন দল হলে এটা মোটেই করত না। বরং তারা দেখতে যে, কীভাবে এখান থেকে ফায়দা লুটতে পারে কি না? কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’
‘এমনকি অনেক ধরনের লোক, আপনারা শুনলে অবাক হবেন এমনকি রিকশার পিছনে যারা পেইন্টিং করে তাদের খোঁজ করে তাদের সাহায্য দেওয়া, এমনকি আমাদের আর্টিস্ট; যারা যন্ত্র সংগীতের সঙ্গে আছে যাদের কোনো স্থায়ী চাকরি নাই তাদেরকেও আমরা সাহায্য করেছি। বিভিন্নভাবে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই এইভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’